বাঁধ ভাঙার আওয়াজ

তোমরা কি জানো শব্দের চেয়ে নৈঃশব্দ হতে পারে অনেক বেশী শক্তিধর? নৈঃশব্দ ধরে রাখতে পারে অনেক বেশী কথা - যা শব্দেরা কখনোই পারে না?? বাঁধ ভাঙার সবটুকু আওয়াজই জমা থাকে, বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা স্থির, নিঃশব্দ পানির বুকে! সেই পানির তোড়ে হঠাৎ যখন বাঁধ ভেঙে যায়, শতধা বিভক্ত শব্দ শুনে চমকে উঠি আমরা। ভুলে যাই, এতদিন নৈঃশব্দের বুকেই, একসাথে, সঞ্চিত ছিল সকল শব্দ। স্থিরতার মাঝেই বাঁধা পড়ে সঞ্চিত ছিল সকল গতি। আমরা সচরাচর মুখ খুলতে চাই না বলে, আমাদের মৌনতাকে তোমরা দুর্বলতা ভেবো না । (more…)

হে ঘাতক!

হে ঘাতক! ভেবো না তুমি আমায় কথার মায়াজালে ভুলিয়ে রাখবে। আমি ঠিকই আমার ভাইয়ের প্রতি বিন্দু রক্তের বদলা চাইবো - চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত, নাকের বদলে নাক। তা সে যতদনিই লাগুক! ভেবো না তুমি জনতার একজন হয়ে যাবে- সময়ের ব্যাবধানে, মিশে যাবে আর সকলের সাথে, সকলের মাঝে। ঘাতক! আর হুকুমের আসামী ছায়া-ঘাতক!! হ্যাঁ তোমাকেও বলছি, শুনে রাখো: ভেবো না ভাইয়ের সমাধিতে ফুল দিলেই ভুলে যাবো আমি সব! আর অনায়াসে তুমি আমার ভাই-বন্ধু কিছু হয়ে যাবে!! (more…)

অপমানে হতে হবে একদিন তাদেরই সমান

দেখতে না দেখতেই চলে গেলো একটি বছর। একে একে ক্যালেন্ডরের বারোটা পাতা ছেড়া হয়ে গেছে । মনে হচ্ছে এই তো সেদিন, সারা দুনিয়া চেয়ে দেখলো - বনানীর কবরস্থানে খোঁড়া হলো সারিবদ্ধ কবর। কেবল দেশকে ভলোবাসার কি চরম মূল্য দিতে হলো, দেশের জন্য “সব-দিতে-পারা” শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। চাটুকার বুদ্ধিজীবীর দল - যারা কেবল "ড্রয়িংরুম-যুদ্ধে” মুক্ত দেশকে বার বার মুক্ত করে পদক লাভ করে - মুখ টিপে হাসলো তারা, আমার ভাইয়ের গলিত লাশের দিকে বিদ্রুপভরে তাকিয়ে - চাটুকার হতে না পারার পরিণতি দেখে। খবর বাণিজ্যের বণিকেরা - শোকের নির্লজ্জ ফটো-বাণিজ্য করলো, আমার ভাইয়ের পিতৃহীন মেয়েদের কবর আঁকড়ে ধরে কান্নার ছবি ছেপে। আমার ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বার বার ডাকা হলো - পৃথিবীতে কোথাও তার আর কিছুই নেই, তা মনে করিয়ে দিতে। (more…)

মিথ্যার অব্যর্থতা

আমি যতদূর জেনেছি, কোন মানুষই অমর নয় - সবাই নশ্বর তবে সৃষ্টির একজন - ইবলিস শয়তান, অবকাশ চেয়ে নিয়েছে বিধাতার কাছ থেকে, আগুনে তার নিশ্চিত অবস্থানের বিনিময়ে। তবু মাঝে মাঝে ভয় হয়: গোয়েবল্স কি আজো বেঁচে আছে? সে কি তাহলে আদতে মানুষ ছিল না? সে কি মূর্তিমান কোন শয়তান ছিল। কি দারুন শয়তানি বাণী বিশ্বের সবাইকে শিখিয়ে গেছে সে: “শতবার বললে, মিথ্যাও সত্যি হয়ে যায়” - কিন্তু সত্যিই কি তাই? শয়তানের মতই দুনিয়ায় রয়েছে তার অজস্র শিষ্য-সন্তান। প্রতিনিয়ত যারা আমায় শেখাতে চায় - মিথ্যার অব্যর্থতা। মিথ্যা আশা, মিথ্যা আশ্বাস, মিথ্যা স্বপ্ন - এমনকি…continue reading →

মৌসুমী ভালোবাসা

সারা বছর সময় কাটলো হিন্দি সিনেমা দেখে, অথবা ভুল শুদ্ধ উচ্চারণে হিন্দি গান গেয়ে । কখনো কিছুটা বুঝে, কখনো বা না বুঝেই- ম্যাডনা, শাকিরা বা মারাইয়া ক্যারির গানে, মাথা দোলানো বা শাখামৃগসুলভ লাফ-ঝাপ দিয়ে । হাই, হ্যালো, ওয়াও বলে স্মার্ট হবার চেষ্টা করে, অথবা লিভাইস ৫০১ আর ৫০৫-এর গল্প করে । সারা বছর সময় কাটলো হ্যারি পটার পড়ে, অথবা সাইবার ক্যাফের নিভৃত কোণে বসে, শয়তানের চিরন্তন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে । এমনকি এই ফেব্রুয়ারীরও প্রথমার্ধও কাটলো বিজাতীয় কোন এক ভ্যালেন্টাইনের স্তব-স্তুতি গেয়ে । তারপর হঠাৎ একটা সময় আসে, খোঁজ পড়ে কালো শাড়ী, কালো শেমিজ কিংবা কালো স্লিভলেস, লিপস্টিকের । (more…)

তুমি আর আমি কিছুতেই এক নই

তুমি আর আমি কিছুতেই এক নই যেমন অবিশ্বাস আর বিশ্বাস এক নয়, আঁধার আর আলো যেমন এক নয়, অসুন্দর আর সুন্দর যেমন এক নয়। শোষক আর শোষিত কখনো এক নয়, যেমন জালিম আর মজলুম এক নয়। তেমনি শাসক আর শাসিত এক নয়- অথবা আমলা আর পাবলিকও এক নয়। (more…)

কথা ছিল

[“এমন তো কথা ছিল না” পড়ে একজন ব্লগার জিজ্ঞেস করেন, “কেমন কথা ছিল?"] কথা ছিল, তুমি হবে আমার দু’চোখ শীতল করা প্রশান্তি। তুমি হবে গভীর বনের মাঝখানের ছায়াঘেরা কালো-জল দীঘি চৈত্রের নির্জন জনশূন্য দুপুরে, নিস্তরঙ্গ কালো জলরাশি যার- আমি তার শান বাঁধানো ঘাটে বসে, একদৃষ্টে শুধু চেয়ে দেখবো তাকে। কথা ছিল, কোন কথা না বলেই তোমার সাথে আমার হবে এক জীবনের ভাব বিনিময় - তুমি আর আমি, পাহাড়ের পাদদেশে বসে নীরবে চেয়ে থাকবো পাহাড়ের পানে, দেখবো কি করে মেঘেরা পাহাড়ের কানে কানে বাক্যহীন কথা কয়। (more…)

রুখবে আমায় কে?

"রুখবে আমায় কে?” - বিজ্ঞাপনে বলা একটা ডাহা মিথ্যা কথা ৷ মানুষকে তার সীমাবদ্ধতাই রুখে দেয়, আকাশ দূরে থাক, ছয়ফুট মানুষ, কিছুতেই নিজগুণে ছুঁতে পারে না দশফুট কার্নিশ! তবু, এমন মিথ্যা বলেই মিথ্যার বেসাতীর ফাঁদ পাতে বেনিয়ারা - স্বপ্নের রাজ্যে নিয়ে যায় স্বপ্নহীন মানুষকে, মিথ্যা গল্প ফেঁদে ৷ তারপর স্বপ্ন খেয়ে, স্বপ্ন পরেই কেটে যায় - "স্বপ্ন-বন্দীর” বাকী জীবন ৷ এ যেন আফিম, হেরোইন, হ্যাশিসের মতই - মিথ্যা সুখে (more…)
“না”!!!

“না”!!!

সেই কবে তুমি যখন একতরফা বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলে, আমি তোমাকে একটি শব্দে "না" বলেছিলাম ৷ অথচ, মনে হলো তুমি তা বুঝতে পারো নি! তুমি তোমার অযাচিত বন্ধুত্বের কথা বলে চলেছো, বলেই চলেছো, সেই কবে থেকে ৷ "না" শব্দের ঠিক কোন অংশটি তুমি বুঝতে পারো নি? তুমি লাভ-লোকসানের সমীকরণ আমাকে বোঝাতে চেয়েছো, "বুঝি কম - শুধু তোমার সঙ্গে আমার হবেনা" এই বলে আমি তোমায় বারণ করেছি ৷ তবু তোমার রঙ্গে আমার মানচিত্র এঁকে আমাকে আমার প্রাপ্তি বোঝাতে চেয়েছো ৷ আমি সত্যিই বুঝিনা - একটি মাত্র শব্দ:"না" - বুঝতে তোমার সমস্যা কোথায়? (more…)
ইসলামের দৃষ্টিতে “ভ্যালেন্টাইন’স ডে” বা “ভালবাসা দিবস”

ইসলামের দৃষ্টিতে “ভ্যালেন্টাইন’স ডে” বা “ভালবাসা দিবস”

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও কল্যাণ বর্ষিত হোক তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এঁর ওপর, তাঁর পরিবার এবং সাহাবীগণের ওপর, এবং সেই সকল লোকদের ওপর, কিয়ামত পর্যন্ত যারা সত্যের পথ অনুসরণ করবে ৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন বা জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে বাছাই করেছেন এবং তিনি অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থা কখনও গ্রহণ করবেন না, তিনি বলেন: "এবং যে কেউই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থা আকাঙ্খা করবে, তা কখনোই তার নিকট হতে গ্রহণ করা হবে না, এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন ৷” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৮৫) (more…)
এমন তো কথা ছিল না

এমন তো কথা ছিল না

কথা ছিল তুমি ফুল তুলে আনবে, তোমার ঐ লাউ-ডগা আঙ্গুলে তুমি ফুল তুলে আনবে ৷ একটি বা দু’টি গোলাপ কিংবা গন্ধরাজ ৷ কথা ছিল তোমার সরু আর জীবন্ত আঙ্গুলগুলো, সস্নেহে বিলি কাটবে মা বা অগ্রজার চুলে, কোন অলস দ্বিপ্রহরে বা শীতের শেষ সকালে ৷ কথা ছিল তুমি স্বপ্ন দেখবে, সত্যি স্বপ্ন, স্বপ্ন হলেও যা সত্যি - এমন কিছু নয় সাদা-মাটা স্বপ্ন, বয়ঃসন্ধিতে যা সকলেই দেখে থাকে ৷ যে স্বপ্নের দাবীও যৎসামান্য, ধরার জন্য দু’টি শক্ত হাত, শত বিঘা জমি নয়, শুধু পুরুষ-বুকের এক টুকরা জমিন ৷ ঝড়-ঝঞ্জায় বা আবেগে নিভৃতে কেবল নিজের মুখটুকু রাখার মত একান্ত নিজস্ব, পুরুষ-বুকের এক টুকরা জমিন ৷ (more…)
আমাদের নিঃসঙ্গতা – ৩

আমাদের নিঃসঙ্গতা – ৩

[প্রিয় ভাই-বোনেরা, এই ব্লগে আমার প্রথম লেখা ছিল "আমাদের নিঃসঙ্গতা" শিরানামের একটা প্রবন্ধ - যা কি না অন্য একাধিক ব্লগেও আগে প্রকাশিত হয়েছে। এই শিরোনামে ২টি পর্ব প্রকাশিত হয়েছিল - কিন্তু কেউ পড়ে থাকলে খেয়াল করে থাকবেন যে, আমার বক্তব্য ঠিক conclude করা হয়নি। ভেবেছিলাম অচিরেই তৃতীয় পর্বটা লেখা হয়ে যাবে, যাতে সত্যিকার অর্থেই একটা উপসংহার থাকবে। কিন্তু এতদিনে তা হয়ে ওঠেনি। আজ সেই তৃতীয় পর্বটা আপনাদের জন্য প্রকাশ করতে যাচ্ছি ইনশা'আল্লাহ্! (more…)
আমাদের নিঃসঙ্গতা – ২

আমাদের নিঃসঙ্গতা – ২

"আমাদের নিঃসঙ্গতা" নামের লেখাটা "আমার ব্লগে" প্রথম পোস্ট করার পর, একজন ব্লগার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আমি কি নিঃসঙ্গতা কাটাতেই (বা নিঃসঙ্গতার ভারে ভারী সময় কাটাতে?) ব্লগে এসেছি কি না! না, আমি নিঃসঙ্গতা থেকে পালিয়ে বেড়াতে বা নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে ব্লগে আসি নি ৷ বরং সত্যি বলতে কি, আমার জীবনে "কাটানোর” মত কোন সময়ই নেই - প্রায়ই মনে হয় দিনে যদি ২৪ টির চেয়ে আরো বেশী কিছু ঘন্টা বা "extra hours" থাকতো ৷ "নীরব একাকীত্ব” কখনো কখনো খুব উপভোগ্যও হতে পারে - হতে পারে খুবই productive ৷ আমি দেখেছি অনেকে "নীরব একাকীত্ব” পছন্দ করেই নাবিকের জীবন বা চা-বাগানের কর্মজীবন বেছে নেন/নিয়েছেন ৷ সেই বেছে নেয়া নিঃসঙ্গতা নিয়ে বলার কিছু নেই ৷ কিন্তু যে নিঃসঙ্গতা মানুষকে কুরে কুরে খায়, অস্থিরচিত্ত করে তোলে, যার প্রভাবে রাত যত গভীর থেকে গভীরতর হয় অস্থিরতা তত বাড়তে থাকে - মানুষ এক ওয়েব সাইট থেকে আরেক ওয়বে সাইটে ঘুরতে থাকে "একটু সঙ্গের আশায়” - হোক না তা virtual companionship ! মানব জীবনের এই দুর্বিষসহ নিঃসঙ্গতা খুবই demeaning - তা মানুষকে ভিখারীসুলভ ও vulnerable করে তোলে ৷ এরকম অবস্থার বশবর্তী হয়েই হয়তো মানুষ আবোল তাবোল বলতে ও লিখতে শুরু করে ৷ (more…)
আমাদের নিঃসঙ্গতা

আমাদের নিঃসঙ্গতা

“দিন পরে যায় দিন, বসি পথ পাশে…………” একটা রবীন্দ্র সঙ্গীতের লিরিক। এই গানটা বা আরো অনেক গানের মূলে রয়েছে, মানুষের নিঃসঙ্গতাবোধ! সকল পরিণত মানুষের মাঝেই শেষ হয়ে যাবার বা ফুরিয়ে যাবার একটা অনুভূতি আসে। ”পরিণত” কথাটা আপেক্ষিক – তবু বলা যায় যে, মানুষ যখন থেকে তার সীমাবদ্ধতা ও insignificance বুঝতে শুরু করে, তখন থেকেই তাকে পরিণত বলা যায় [এটা যদিও ”পরিণত” বয়সের ডাক্তারী সংজ্ঞা নয়]। এ সময় থেকে মানুষ হয়তো নিঃসঙ্গ বোধ করতেও শুরু করে। এই নিঃসঙ্গতাবোধ আবার তার মাঝে একধরনের অস্থিরচিত্ততারও জন্ম দেয়। সে তখন একটা আগ্রহ থেকে আরেকটা আগ্রহে, একটা ভালো লাগা থেকে আরেকটা ভালো লাগাতে – এমন কি কখনো কখনো একটা বন্ধুত্ব থেকে আরেকটা বন্ধুত্বে switch over বা অবস্থান বদল করতে থাকে। বার বার সে ভাবে, আবারো, রবীন্দ্রনাথের কথায়: ”যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না”। (more…)