হাদীস শব্দটির অর্থ

আভিধানিক ভাবে ‘হাদীস ’শব্দটির অর্থ হচেছ :
নতুন, সাম্প্রতিক, নতুন ভাবে অস্তিত্বলাভকারী, প্রথম বারের মত, আগে যা ছিল না …. তথ্য, একটা তথ্য বিশেষ, মেধা, ঘোষণা …একটা জিনিস বা ব্যাপার , যা নিয়ে কথা বলা হয় , যা বলা হয় ,অথবা বর্ণনা করা হয় …।

কুর’আন এবং হাদীস দুটোতেই, শব্দটি একটি ধর্মীয় যোগাযোগ, একটা সাধারণ কাহিনী, একটা ঐতিহাসিক কাহিনী, এবং একটা ঘটমান কাহিনী বা কথোপকথন বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে ৷ পারিভাষিকভাবে একটা হাদীস হচ্ছে মূলত রাসূল (সা.)-এঁর যে কোন বর্ণনা – তার কথা কাজ এবং নীরব সম্মতি, আচরণ, শারীরিক বৈশিষ্ট অথবা জীবন বৃত্তান্ত সংক্রান্ত যে কোন বর্ণনা ৷ অন্য কথায়, হাদীসের স্কলাররা যেভাবে সুন্নাহর সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন, সেই অনুযায়ী সুন্নাহ সংক্রান্ত যে কোন বর্ণনাই হচ্ছে হাদীস ৷

যে কোন হাদীসই দুইটি উপাদান দ্বারা গঠিত:

১) ইসনাদ বা বর্ণনাকারীদের ধারা, এবং
২) মতন বা হাদীসের বক্তব্য/ভাষ্য (text) ৷ এই অংশদ্বয়ের উভয়কেই বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয় – তবেই কোন একটা হাদীসকে গ্রহণ করা হয় এবং সেটাকে সত্য বলে গণ্য করা হয় ৷

সাধারণভাবে হাদীসকে পাঁচটি মৌলিক শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়:

ক) সহীহ বা শুদ্ধ
খ) হাসান বা ভাল হাদীস
গ) যয়ীফ বা দুর্বল হাদীস
ঘ) যয়ীফ জিদ্দান বা খুবই দুর্বল হাদীস

এবং
ঙ) মাওদু বা জাল হাদীস ৷

আসলে এই সবকটিকে আরো মৌলিক পর্যায়ে কেবল দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় ৷ গৃহীত বা গ্রহণযোগ্য হাদীস ( সহীহ বা হাসান ) এবং প্রত্যাখ্যাত হাদীস (যয়ীফ, যয়ীফ জিদ্দান এবং মাওদু) ৷ ইসলামিক শরীয়া আইনের সূত্র বা দলীল হতে হলে, একটা হাদীসকে, অবশ্যই সহীহ বা হাসান পর্যায়ের হতে হবে ৷ যেকোন একটি হাদীস নিজগুণে সহীহ বা হাসান বলে পরিগণিত হতে হলে তাকে নিম্মলিখিত পাঁচটি শর্ত পূরণ করতে হবে:

১) ধারাবহিকতার সূত্র বা ইসনাদ নিরবচ্ছিন্ন হতে হবে ৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, প্রত্যেক পর্যায়ের বর্ণনাকারীকে সরাসরি তার পূর্ববর্তী সূত্রের কাছ থেকে হাদীসটি লাভ করতে হবে – যার বরাত দিয়ে তিনি তা বর্ণনা করেছেন ৷ এবং এভাবে পিছনে যেতে যেতে তা রাসূল (সা.) পর্যস্ত পৌছাতে হবে ৷ এই ধারাবাহিক সূত্রের মাঝে কোথাও যদি কোন বর্ণনাকারী সূত্রের অনুপস্থিতি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে যে সূত্রের ধারাবাহিকতা নিরবছিন্ন নয় এবং তাই তা অগ্রহণযোগ্য ৷
২) সূত্রের ধারাবাহিকতায় প্রত্যেক বর্ণনাকারীকে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য তাকওয়া, ন্যায়পরায়ণতা ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, অন্য কথায় প্রত্যেক বর্ণনাকারীকে নৈতিক দিক দিয়ে অবশ্যই সুস্থ হতে হবে৷ পরহেজগার নন এমন ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নন – কেননা তারা যে পরহেজগার নন সেটা প্রতীয়মান করে যে, তারা আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা উচিত, সেভাবে করেন না ৷ আর তাই নবী (সা.)-এঁর বক্তব্যসমূহ বর্ণনা করার ব্যাপারে তারা যে চুড়ান্ত যত্বশীল হবেনই, সে ব্যাপারে তাদের উপর আস্থা রাখা যায় না৷ সূত্রের ধারায় যদি কেবল একজন বর্ণনাকারীও এই গুণগত মানদন্ডে উত্তীর্ণ না হন, তবে সে হাদীসকে প্রত্যাখান করতে হবে ৷
৩) শুধু নৈতিক বৈশিষ্টই এখানে যথেষ্ট নয় ৷ হাদীস বর্ণনা কারীকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে এবং হুবহু বর্ণনায় সমর্থ হতে হবে ৷ যদি এমন জানা যায় যে, কেউ হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক ভুল করেন – তার স্মৃতি থেকেই হোক আর লেখা থেকে হোক -তবে তার হাদীস গ্রহণ করা হবে না ৷
৪) একটা হাদীসের ইসনাদ ও মতন দুটোই এমন হতে হবে যে, অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সূত্র থেকে যা বর্ণনা করা হয়েছে, তার সাথে যেন তারা বিরোধপূর্ণ না হয়৷
৫) যখন নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরে একটি হাদীস বর্ণনা করা হয়, তখন ব্যাপারটা যেন এমন হয় যে ঐ হাদীসের ইসনাদ বা মতনে কোন ভুল ভ্রান্তি বা খুঁত দেখা না যায় ৷

উপরোক্ত শর্তগুলোর একটিও যদি পূরণ না হয় তবে হাদীসটিকে দুর্বল (যয়ীফ) অথবা অত্যন্ত দুর্বল (যয়ীফ জিদ্দান) বলে প্রত্যাখ্যান করা হবে (দুর্বলতার মাত্রার উপর নির্ভর করে) যেসব হাদীকে যয়ীফ বা র্দুবল বলে চিহ্নিত করা হয় – সেগুলোর পক্ষে পর্যাপ্ত সমর্থনকারী সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে, সেগুলোকে হাসানের পর্যায়ে উন্নতি করা যেতে পারে ৷ যেসব হাদীসকে “যয়ীফ জিদ্দান” বলে চিহ্নিত করা হয়, সেগুলোর দুর্বলতার মাত্রা বা প্রকৃতি, সেগুলোকে কোন কিছু সমর্থনকারী প্রমান হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া অথবা অন্য কিছু দ্বারা সমর্থিত হওয়া থেকে বারণ করে ৷ আর তাই এগুলোকে (”যয়ীফ জিদ্দান” হাদীসসমূহকে) কখনোই হাসান পর্যায়ে উন্নতি করা উচিত নয় ৷ অবশ্য জাল হাদীস একদমই ভিন্ন একটা শ্রেণী বলে বিবেচিত হয় এবং সেগুলো কখনোই কোন অবস্থায় ইসলামী আইনের কোন সূত্র বলে বা ইসলামী আইনে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না ৷

[Page26~28, The Authority and Importance of Sunnah – Jamaal al-Din M. Zarabozo, থেকে অনুদিত।]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *