[গত ১৫/১২/২০১০ তারিখে অন্য ব্লগে প্রকাশিত – যখন খবর এসেছিল ওরা পাদুয়া দখল করে নিয়েছে]

স্বাধীনতা তুমি কোথায় লুকিয়ে রয়েছো?
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য, কত কথকতা!
তুমি কি আজকের খবর পড়েছো?
দেখেছো দেশের মানচিত্রের আরেকটি অংশ-
কেমন খুবলে ছিঁড়ে খেলো ব্রাহ্মণ্যবাদীরা।
এমনিতে ওরা নাকি নিরামিষাশী,
নিজের দেশকে “মা” জ্ঞান করে।
কিন্তু অপরের মায়ের অংশ বা “মাংস” –
অনায়াসে ছিঁড়ে-কুটে খেতে পারে!
তুমি কি তাহলে লজ্জায় কোথাও লুকিয়ে আছো?

স্বাধীনতা তুমি কোথায় লুকিয়ে রয়েছো?
মনে হয়:”কত দিন দেখিনি তোমায়!”
তোমাকে নিয়ে বাণিজ্য শুরু হবার পরে –
তোমার খোঁজে আমি ছুটে ছুটে গেছি –
বাণিজ্যের কতশত ঝলমলে আয়োজনে-
বাটেক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে, অথবা,
শাহরুখগণের বাংলার বস্ত্রহরণ আয়োজনে।
কোথাও তো তোমার দেখা পেলাম না-
তুমি কি তবে লজ্জায় চাদর মুড়ি দিয়ে ছিলে?
নিজেকে গোপন করেছিলে কোন অন্ধকার কোণে?

স্বাধীনতা তুমি কোথায় লুকিয়ে রয়েছো?
একটি বার কেন প্রকাশ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে,
অথবা, মানিক মিয়ার প্রান্তরে এসে দাঁড়িয়ে,
বজ্রকন্ঠে জানান দিয়ে যাও না – তুমি কার?
স্বাধীনতা, তোমার তো বয়স বেড়েছে –
এক, দুই, করে তুমি পৌঁছে গেছো চল্লিশে!
তবু কি আজো সংশয় গেলো না তুমি কার?
ছিঃ! আমায় বলো না যে, এই বয়সে তোমার
পরিচয় জানতে ডি.এন.এ. টেস্টের দরকার!

স্বাধীনতা তুমি কার? রাজরাণীর না রাজকন্যার?
নাকি ৭১-এ সোনাগাছিতে মদ-বেশ্যায় চুর হয়ে
থাকা – বামপন্থী কমরেড ও নেতা-পাতিনেতার?
২৭মার্চে পূর্ব-বাংলা যখন মহা-শ্মশানের রূপ ধারণ করে,
৭ কোটি মানুষ যখন বিমূঢ় প্রাণহীন দেহে পরিণত হয় –
তখন যে কন্ঠটি বিধাতার ইঙ্গিতে আমাদের নিয়তি নির্ধারণ করেছিল;
যে বজ্রকন্ঠ মরুর বৃষ্টির মত মুহূর্তে জীবন্ত করে তুলেছিল
৭ কোটি মরদেহের মহা-শ্মশানকে, তোমার পণ্যায়নের পরে
আজ নাকি সেও তোমার শত্রু , বিরোধী দালাল।
কি লজ্জা তোমার – তোমার কি ডি.এন.এ. টেস্ট দরকার!
স্বাধীনতা তুমি বলে দাও তুমি কার? কেবলই রাজপুত্রের
নাকি রাজ-দৌহিত্রের? নাকি, কিছুই তুমি দিতে পারনি যাদের-
যাদের নাগরিকত্ব কেবল আদশুমারী আর ভোটার আইডিতে
সীমাবদ্ধ – তুমি তাদেরও। পাজেরো না, হামার না, কন্ডো না
এমন কি মাথার উপর বাঁশের বেড়ার একখানা ছাদও নয় –
তুমি কি তাদেরও নও? স্বাধীনতা সত্যি বলো তো তুমি কার?

তুমি কি “স্বাধীনতা-বাণিজ্যের” ভয়ে আজ লুকিয়ে রয়েছো?
না কি তুমি আজ প্রতিবন্দী, নিজের ভার বহনে অক্ষম!
স্বাধীনতা, তুমি কি আজ পাদুয়ার মতই অরক্ষিত?
তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে কি তাহলে আরেকটি যুদ্ধ দরকার??

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *