রামাদানে রোজা রাখা
রামাদানে রোজা রাখা -১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম
রামাদানে রোজা রাখা – ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি।
আমরা ইনশা’আল্লাহ্ কয়েকটি পোস্টে এই ব্যাপারটা বিস্তারিত আলাপ করবো। তবে, আজ শুধু দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পৃক্ত, সাধারণ কিছু কথাবার্তা বলবো।
”রামাদানের পবিত্রতা রক্ষা করুন” বলে একটা স্লোগান প্রায়ই শোনা যায় বা এই লেখা সম্বলিত ব্যানারও প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু এটা হালে কেবল একটা ”বাম্পার স্টিকার” বা সুন্দর বাক্যের স্টিকারে পরিণত হয়েছে। রামাদানে আসলে একমাসের “পবিত্রতা রক্ষার” যে প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন হয় (বা হবার কথা), তাই দিয়ে গোটা বছর সুন্দর, সুস্থ ও পবিত্র একটা জীবন যাপন করার ইচ্ছা হবার কথা এবং সে অনুযায়ী চেষ্টা করারও কথা। কিন্তু আমরা কি ব্যাপারগুলো বুঝি বা সেসব নিয়ে চিন্তা করি? আমাদের, বিশেষত, নাগরিক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর উপর, রামাদানের প্রভাব কতটুকু? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে রামাদানের শেষে ঈদ উপলক্ষে নির্মিত ছায়াছবি, টেলিফিল্ম, বিশেষ নাটক, বিনোদোন অনুষ্ঠান ইত্যদির দিকে তাকিয়ে দেখাই যথেষ্ঠ। সেভাবে দেখলে, রামাদানকে, অশ্লীলতার “দৌড় প্রতিযোগীতা” শুরু হবার ঠিক আগের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, জিরিয়ে নেয়ার সময় বলে মনে হতে পারে।
অন্যত্র দেখেছি এই একমাস সময়কে অনেকটা “দ্বীন–শিক্ষার” একটা “প্রশিক্ষণ মাস” হিসেবে ধরে নিয়ে কেউ শুদ্ধ করে কুর’আন পড়তে শেখেন, কেউবা তারাবীতে রাতে যে অংশটা পড়া হবে – কুর’আনের সেই অংশটা অর্থসহ, দিনের বেলাই আগাম পড়ে রাখেন; এছাড়াও নানারকম সামষ্টিক কর্মকান্ডের আয়োজন বা ওয়ার্কসপের আয়োজন করা হয়। আমাদের দেশেও যে এসব একদম হয় না তা বলা যাবেনা – তবে জনসংখ্যার ৮৭% মুসলিমের পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে যতটুকু হবার কথা, সে তুলনায় তা অপ্রতুল।
somewhereinblog, “আমার-ব্লগ” বা “সোনার বাংলাদেশ” ব্লগকে যদি আমাদের দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর representative sample বলে ধরে নেয়া যায়/হয়, তাহলে আপনি দেখবেন/বুঝবেন যে, কি নিয়ে আমরা মেতে আছি। অন্য সবার কথা না হয় বাদই দিলাম, আমরা যারা ইসলামের ভিত্তিতে আমাদের জীবন গঠন করতে চাই বা যাপন করতে চাই, তারাই বা কি নিয়ে কথা বলছি বা কি সব আলোচনায় জীবনের মহা মূল্যবান সময় কাটিয়ে দিচ্ছি। আমার অত্যন্ত কাছের দুজন মানুষ, গত রামাদানে একেবারে সুস্থ ছিলেন তারা – আজ দুজনেই মৃত। আমরা কি করে নিশ্চিত হই যে, আমাদের জন্য বছরের পর বছর ধরে রামাদান আসবে – আর এবার না হোক, আগামীবার বা তার পরের বার আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নেবো!
আসুন আমরা আল্লাহর দ্বীনের সঠিক রূপ কি তা জানার চেষ্টা করি এবং সেই অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করি। আমীন।
রামাদানে রোজা রাখা – ২
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
[এর আগের পর্বটা রয়েছে এখানে:
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/55688]
আমরা আগেই বলেছি যে,
রামাদানে রোজা রাখা – ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি।
আমরা আগের আলোচনার সূত্র ধরে, রামাদান সংক্রান্ত আমাদের আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে যাবো ইনশা’আল্লাহ্!
বাংলাদেশ সহ, প্রায় সকল মুসলিম দেশের শহর কেন্দ্রিক নাগরিক জীবনে রামাদান হচ্ছে কেনাকাটার, অপচয়ের এবং ভুরিভোজনের প্রতিযোগীতার মৌসুম – রাতকে দিন বানিয়ে, ব্যয়ের উৎসবে মেতে ওঠার মৌসুম। বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলো খুললেই আপনি দেখবেন যে, রামাদান সংক্রান্ত খবরগুলি হচ্ছে হয় নতুন জামাকাপড় ইত্যাদির বাজারের খবর অথবা চকবাজারের ইফতারীর সমারোহের চিত্র অথবা ইফতারীর না না রকম আইটেমের রেসিপি। কোন অমুসলিম বিদেশী, রামাদান সম্বন্ধে না জেনে থাকলে, ব্যাপারটাকে পশ্চিমা জগতের carnival-এর মত কিছু বলে ভুল করতে পারেন। বেশ কবছর ধরে, ঢাকায় বড় হওয়া এই আমার কাছেই রামাদানের সময়টাকে ”ইফতারী বিপ্লবের” বা “ভোজন বিপ্লবের” একটা সময় বলে মনে হয়। আমাদের দেশের এলিট তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আয়োজন করা ”ইফতার-পার্টি” এই ”বিপ্লবে” এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অথচ তাই কি হবার কথা ছিল – রামাদান মাসের কি আমাদের রসনা তথা ভোগ-বিলাসের স্পৃহাকে উসকে দেবার কথা ছিল? নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবসায়ীরা যে সারা বছর অতিরিক্ত মুনাফার জন্য এই সময়টার দিকে তাকিয়ে থাকে – তাই কি হবার কথা ছিল? আমরা যদি সত্যি “বিরত” থাকতে পারতাম, তবে কি তারা এ সময়টার ফায়দা লুটতে পারতো? তাছাড়া কথাতো ছিল আমরা কম খেয়ে, সংযত আচরণের মাধ্যমে যে সঞ্চয় বা সাশ্রয় করবো, তা থেকে বেশী বেশী দান-খয়রাত করবো – কিন্তু আমরা কি তাই করে থাকি? নীচের সংজ্ঞা ও বর্ণনাগুলো পড়তে পড়তে আসুন, আমরা তা ভেবে দেখি:
[রোজা বা] সিয়ামের অর্থ:
ভাষাগতভাবে “সিয়াম” অর্থ হচ্ছে কিছু থেকে বিরত থাকা যেমন – ধরুণ কথা বলা থেকে বিরত থাকা। শরীয়াহ্য় যখন “সিয়াম” বলা হয়, তখন সরাসরি খাদ্য, পানীয় ও যৌন সংসর্গ থেকে, রামাদান মাসের দিনগুলোর দিবাভাগে বিরত থাকাকে বোঝায়। এই কাজটি ইসলামের স্তম্ভগুলোর একটি – যেমনটা আমরা হাদীস জিবরীলে [“উম্মুল সুন্নাহ্” বলে পরিচিত মুসলিম শরীফের বিখ্যাত হাদীস – যেখানে জিবরীল (আ.) প্রশ্নের জবাবে রাসূল(সা.) ইসলামের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে “রামাদানে রোজা রাখাকে” ইসলামের একটি অবশ্যকরণীয় হিসেবে উল্লেখ করেন] দেখতে পাই।
সিয়ামের গুরুত্ব:
“সিয়াম” হচ্ছে আত্ম-সম্বরণ, পরহেজগারী ও “আল্লাহ্-সচেতনতা” অর্জনের একটা মাধ্যম। রাসূল (সা.)-এঁর আগের নবীদের বেলায়ও কোন না কোন আঙ্গিকে উপবাসের নিয়ম প্রযোজ্য ছিল। রামাদান মাসের রোজাকে ফরজ করে যে আয়াত নাযিল হয় – তাতে আল্লাহ্ রোজার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্দেশ করেছেন :
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য “সিয়াম” নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমনটা তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল – যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাক্বারা, ২ : ১৮৩)
রাসূল (সা.) বলেছেন যে, রোজা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবার ব্যাপারে একটা সুরক্ষা বুহ্য বা ঢাল :
“তোমরা যুদ্ধে যেমন ঢাল ব্যবহার কর, “সিয়াম” হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবার জন্য সেরকম একটা ঢাল।” (আহমাদ, নাসাঈ ও অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে – আলবানীর মতে সহীহ)।
উপরন্তু কিয়ামতের দিনে তা এক শাফায়াতকারী রূপে বা মধ্যস্থতাকারী রূপে কাজ করবে। রাসূল (সা.) বলেন,
“রোজা এবং কুর’আন পুনরুত্থান দিবসে মধ্যস্থতাকারী (বা সুপারিশকারী) হিসেবে আবির্ভূত হবে। রোজা বলবে, ‘হে প্রভু! আমি তাকে দিবাভাগে তার খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই (আজ) আমাকে তার পক্ষে সুপারিশ করতে দিন।’ পবিত্র কুর’আন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে ঘুমানো থেকে বিরত রেখেছিলাম, সুতরাং আমাকে তার জন্য সুপারিশ করতে দিন।’ তখন তাদের সুপারশ করার অনুমতি দেয়া হবে।” (আহমাদ দ্বারা লিপিবদ্ধ – আলবানীর মতে সহীহ্)
“সিয়াম” হচ্ছে এমন একটা কাজ যা আল্লাহর প্রতি যে কারো বিশ্বস্ততাকে প্রতিফলিত করে। কেউ সত্যি “সিয়াম” পালন করলো কিনা বা রোজা রাখলো কিনা – তা একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন। সে গোপনে রোজা ভেঙে কিছু খেলো কিনা তা অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সেজন্য, যারা রোজা রাখেন, তাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। নিম্নলিখিত হাদীসে কুদসীতে তা বলা হয়েছে,
আল্লাহ্ বলেছেন, “সে তার খাবার, পানীয় ও বাসনা আমার জন্য ত্যাগ করেছে। ‘সিয়াম’ হচ্ছে আমার উদ্দেশ্যে এবং আমি তার প্রতিদান/পুরস্কার দেব এবং প্রতিটি সৎকাজের জন্য ১০ গুণ প্রতিদান দেয়া হবে।” (বুখারী)
আল্লাহর রহমতে ও করুণায়, একজন ব্যক্তি যদি আল্লাহর বিশ্বাস সমেত এবং প্রতিফল পাবার আশায় রামাদান মাসের রোজা রাখে, তাহলে আল্লাহ্ তার পূর্ববর্তী সব সগীরা গুনাহ মাফ করে দেবেন। রাসূল (সা.) বলেন :
“যে ঈমান সহকারে ও প্রতিফল পাবার আশা নিয়ে রামাদান মাস রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
রামাদানে রোজা রাখা – ৩ [তারাবী পড়ে আসলাম]
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
[এর আগের পর্ব দু’টো রয়েছে এখানে:
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/55688
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/55900]
সেদিন তারাবী পড়ে আসলাম ঢাকার অভিজাত এলাকার একটা মসজিদে। আমি বেশ দূর থেকে ওখানে যাই – একটু ভালো ক্বিরাত শোনার জন্য – তিন জনে পড়েন, আর ধীর গতিতে পড়েন। কিছুটা আরবী বুঝি বলেও, ভালো তেলাওয়াত শুনতে খুব ভালো লাগে। মসজিদের যেখানটায় আমি ছিলাম (নীচের তলার প্রথম সারিতে), তার আশে পাশে ছিলেন বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক অতীতের অনেক জেনারেলরা – ৪তারা, ৩ তারা, ২ তারা ও ১ তারা জেনারেলরা – যাদের পদভারে একসময় মাটি কেঁপেছে – যাদের চিৎকার করা খালি গলার কমান্ডে পুরা প্যারেড স্তব্ধ হয়ে গেছে। আর লাল ফিতা ছাড়াও যারা চাকুরী করেছেন – তেমন বহু ক্যাপ্টেন বা মেজর যে ঐ জামাতে ছিলেন, তা বলাই বাহুল্য। ভাবছি সেদিন তারা দেড় ঘন্টারও বেশী সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে ‘ঈশা ও বিতর সহ তারাবী পড়লেন কেন?? একদম সহজ উত্তর হচ্ছে: তারা সকলেই বিশ্বাসী – সেজন্য। বাংলাদেশের সকল সাধারণ মসজিদে, প্রথা অনুযায়ী, সেদিন দেড় পারা পড়ার কথা – যারা “হাফিজী কুর’আন” সম্বন্ধে জানেন, তারা জেনে থাকবেন যে, এভাবে পড়তে গেলে প্রতি রাকাতে কতটুকু পড়তে হবে তাও একধরনের নির্ধারিত। সেদিনের তারাবীর ৭ম রাকাত শেষ হলো সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দিয়ে:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
“…………….Our Lord! Condemn us not if we forget or fall into error; our Lord! Lay not on us a burden like that which Thou didst lay on those before us; our Lord! lay not on us a burden greater than we have strength to bear. Blot out our sins, and grant us forgiveness. Have mercy on us. Thou art our Protector; help us against those who stand against Faith.”
“…………হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না ৷ হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন ৷ হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই ৷ আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন ৷ আপনি আমাদের অভিভাবক ৷ অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন ৷ “
এই আয়াতটা দিয়ে আমি অনেক সময় অনেক ‘আলেমকে মুনাজাত করতে শুনেছি – আর সে সময় তাঁদের কান্না লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতেও দেখেছি। মক্কার মসজিদুল হারামের ঈমাম আব্দুর রহমান আস সুদাইসকেও কুর’আন খতমের সাথে সাথে করা দোয়াতে এই আয়াত উচ্চারণ করে কাঁদতে শুনেছি। অথচ, সেদিন আমার তারাবী নামায পড়া মসজিদে কোন commotion টের পেলাম না। সেদিনের তারাবীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও হয়তো ঐ আয়াত শুনেছেন, তিন বাহিনীর প্রধানরাও শুনেছেন, ধরে নিচ্ছি সকল মুসলিম ও পুরুষ মন্ত্রীরাও শুনেছেন, আমলারা শুনেছেন, দেশের নেতৃবর্গ শুনেছেন – আর আমাদের অবসর প্রাপ্ত faithful জেনারেলদের সাথে সাথে, আমার মত আম- জনতা বা “ম্যাঙ্গো-পিপলরা” তো শুনেছিই। শেষ লাইনে আমরা কি বললাম? “অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন ৷“ আমরা কি বুঝলাম আমরা কি চাইলাম? নাকি আল্লাহর সাথে একধরনের “ফাজলামি” করলাম – শুধু বলার জন্যই একটা কথা বললাম – কিছু mean করলাম না! আসলে তো শয়নে-স্বপনে-নিদ্রায়-জাগরণে আমরা “কাফির সম্প্রদায়ের” মত হবার প্রাণান্তকর চেষ্টায় “মুষিক-দৌড়ে” ব্যস্ত! এভাবে, “যা বলা হলো, তা mean না করার“ জন্যই একদিন মধ্যযূগীয় বুখারা, সমরখন্দ তথা বাগদাদের উপর আল্লাহর wrath বা “গদব” হিসেবে নেমে এসেছিল দুর্বার মঙ্গোলদের খড়গ। আমার তো ভয় হয়, প্রার্থনায় দাঁড়িয়ে যা mean করি না তা বলার জন্য, আমাদের জন্যও পৃথিবীর কোন দূর-দূরান্তে হয়তো প্রস্তুত হচ্ছে কোন “নব্য-মঙ্গোল” বাহিনী – কখন আমাদের উপর তারা আল্লাহর wrath হিসেবে নেমে আসবে, তা কেবল সময়ের ব্যাপার! বিশ্বাসী মুসলিম পাঠকগণ – আপনাদের কি মনে হয়??
রামাদানে রোজা রাখা – শেষ পর্ব
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
[এর আগের পর্বগুলো রয়েছে এখানে:
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/55688
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/55900
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/56393]
আমরা আগে বলেছিলাম যে,
রামাদানে রোজা রাখা – ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি।
আমরা রামাদান নিয়ে আমাদের আলোচনার শেষভাগে উপনীত হয়েছি – রামাদানে রোজা রাখা নিয়ে আমাদের লেখার এটাই শেষ পর্ব। রামাদান আমাদের মাঝে কোন পরিবর্তন আনতে পারছে/পারলো কিনা, আমরা আমাদের গুনাহ্ মাফ করানোর যথেষ্ট চেষ্টা করতে পারলাম কিনা, আরেকটা সুযোগ (বা আরেকটি রামাদান) আমাদের জীবনে আদৌ আসবে কিনা, আজ থেকে নিয়ে রামাদান মাসের যে কয়টা দিন বাকী রয়েছে, সে কয়টা দিনকে কিভাবে সব চেয়ে বেশী কাজে লাগাতে পারি ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে পারি আমরা। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য দিয়ে শেষ করবো ইনশা’আল্লাহ্!
সিয়াম বা রোজার উপকারীতা সম্বন্ধে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন,
“রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে কামনা–বাসনার জোয়াল থেকে মানুষের আত্মাকে মুক্ত করা এবং তার পশু সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রিত রাখা, এবং এর মধ্য দিয়ে সে আত্মশুদ্ধি ও স্থায়ী পরিতৃপ্তির ল্ক্ষ্য অর্জন করে। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাধ্যমে লোভ ও লালসার প্রবণতাকে হ্রাস করা হচ্ছে এর উদ্দেশ্য – যাতে সে উপলব্ধি করে যে, পৃথিবীতে কত মানুষ সামান্য একটু খাদ্য ছাড়াই তারই মত ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ে দৈনন্দিন জীবন যাপন করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শয়তানের জন্য, তাকে ধোকা দেয়ার কাজটিকে কঠিন করে তোলা এবং স্বীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে এমন সব কাজ থেকে বিরত রাখা যেগুলোর মাঝে তার জন্য দুই জাহানের ক্ষতি নিহিত রয়েছে। রোজা তাই হচ্ছে আল্লাহ্ ভীরুদের জন্য লাগাম স্বরূপ, সংগ্রামরত যোদ্ধাদের জন্য ঢাল স্বরূপ এবং গুণীজনদের জন্য শৃঙ্খলা।”
যারা সঠিকভাবে সিয়াম সম্পূর্ণ করে না বা অশুদ্ধ পন্থায় রোজা ভাঙ্গে, তাদের শাস্তি সম্বন্ধে সতর্ক করে রাসূল (সা.)-এঁর একটি হাদীস রয়েছে :
“আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন দুইজন লোক আমার কাছে এলেন এবং আমার বাহু ধরলেন। তারা আমাকে একটা খাড়া পাহাড়ের কাছে নিয়ে এসে বললেন ‘(পাহাড়ে) ওঠো’। আমি বললাম, ‘আমি তা করতে সক্ষম নই।’ তারা বললেন, ‘আমরা আপনার জন্য তা সহজ করে দেবো।’ আমি তখন পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত ওঠা অবধি চলতে থাকলাম, সেখানে পৌঁছে করুন আর্তনাদ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসব কিসের আর্তনাদ?’ তারা বললেন, ‘এসব হচ্ছে জাহান্নামের আগুনের বাসিন্দাদের আর্তচিৎকার।’ তারা আমাকে আরো সামনে নিয়ে গেলেন, যেখানে আমি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা লোকজনের একটা সমষ্টি দেখতে পেলাম যাদের চোয়ালের হাড়গুলো ভাঙ্গা এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি বললাম, ‘এরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘এরা হচ্ছে এমন লোকজন, যারা সঠিক সময়ের আগেই, তাদের রোজা ভঙ্গ করেছিল।” (ইবন হিব্বান ও ইবন খুজাইমা কর্তৃক সংগৃহীত – আলবানীর মতে সহীহ)।
যে রোজা রাখে না, তার বেলা বিধান:
কোন ব্যক্তি যদি সিয়ামের ফরজিয়াত বা সিয়াম যে ফরজ তা অস্বীকার করে, তবে সে “কাফির” হয়ে যায়। ফরজ হিসাবে রোজার নির্ধারণ ও মর্যাদা কুর’আনে ও বহু হাদীসে প্রমাণিত।
আল–যাহাবী লিখেছেন :
“প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসীদের মতে, অসুস্থ হওয়া ছাড়া – যে কেউ যদি রামাদান মাসের রোজা ছেড়ে দেয়, তবে সে একজন ব্যভিচারী বা মদ্যপায়ীর চেয়েও অধম। আসলে তখন তার ইসলামকে নিয়ে সন্দেহ জাগে এবং সে “যিন্দিক” কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় – তাদের একজন যারা ইসলামকে ধ্বংস করে।”