রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মুসলিমদের সম্পৃক্ততা
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মুসলিমদের সম্পৃক্ততা – ১
মূল: সেলিম মরগ্যান
(যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি মসজিদের ইমামের খুতবা থেকে রূপান্তরিত এই লেখাটি আদতে আমেরিকায় বসবাসরত মুসলিমদের জন্য হলেও, এখনকার পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের বেলায়ই প্রযোজ্য)
আমার মনে হয় আজ আপনারা যা শুনতে এসেছেন তা হচ্ছে “ওদের” রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আমরা কতটুকু জড়িত হবো সে নিয়ে আলোচনা। এখানে হয়তো “ওদের” শব্দটা বাদ পড়ে গেছে। এভাবে বললে আপনা আপনিই কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়: ওদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আমাদের অংশগ্রহণ কতটুকু হবে? এ নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমেই যে কথাটা মনে আসে তা হচ্ছে নির্বাচন। এবং আপনারা দেখবেন কিছু মুসলিম এই বলে ছুটাছুটি করে যাচ্ছেন যে, আমাদের কাজ করে যাওয়া উচিত যতক্ষণ না আমরা [আমেরিকার] একজন মুসলিম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারছি এবং আপনারা জানেন তারপর কি হবে বলে তারা মনে করেন। কাউকে তার অফিসে নির্বাচিত করা [তা প্রেসিডেন্ট, গভর্ণর, মেয়র, ইত্যাদি না না ধরনের অফিস হতে পারে], বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই [এবং STATE-এর বিভিন্ন পর্যায়ের পদগুলোর জন্যও যা প্রযোজ্য] – একটা অনুমোদিত বা জায়েজ ব্যাপার হবে না। কারণ, সরকারের বিভিন্ন স্তরে একজন নির্বাচিত কমকর্তা হতে হলে আপনাকে তাদের দ্বীনে বিশ্বাস করতে হবে এবং আপনাকে তাদের “পবিত্র নথিপত্রের” প্রতি অনুগত হতে হবে, [ইসলামে বা মুসলিমদের জন্যে] যার অনুমতি দেয়া হয় না । তবে কোন কোন স্তরে কোন গঠনমূলক ব্যাপারে বিশেষ ক্ষেত্রে এটা অনুমোদন যোগ্য হতেও পারে। উদাহরণ স্বরূপ একজন মুসলিম ছেলে কোন স্কুলে যায় এবং সবাই যদি তাকে ক্লাসের প্রেসিডেন্ট [মনিটর] বানাতে চায়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, একজন মুসলিম ছাত্রকে সবার ক্লাসের নেতা বানানোর ইচ্ছা হবারই কথা – যদি তা না হয় তবে বুঝতে হবে, কোথাও কোন সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এখানে কোন পবিত্র নথির প্রতি আনুগত্য বা শপথের ব্যাপার নেই। বরং এক ধরনের জীবন যাত্রার উপর আরেক ধরনের জীবনযাত্রার শ্রেষ্ঠত্ব থেকেই এই নির্বাচিত করার ব্যাপারটা আসবে [অর্থাৎ ছেলেটার চরিত্রের মাঝে ইসলামলব্ধ গুণগুলো ফুটে উঠবে এবং তা থেকেই সাবই তাকে নেতা বানাতে চাইবে]। এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার এবং এ থেকে আমার জানামতে কোন নেতিবাচক পরিণতির সম্ভাবনা নেই। মিউনিসিপ্যালিটি অথবা অন্যান্য ছোট খাটো স্থানীয় ব্যাপারগুলোতেও হয়তো বিষয়টা একই ধরনের হতে পারে। এবং সেক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হবে, তাতে মুসলিমদের কোন লাভ হবে কিনা। অর্থাৎ, এই ঘটনা [নির্বাচন] থেকে মুসলিমদের কোন লাভ হবে কিনা। সেই লাভ কেবল দাওয়া [বা ইসলামের পথে মানুষকে ডাকা] থেকে শুরু করে অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন একটু আগের উদাহরণের মুসলিম ছেলেটির উন্নত চরিত্র এবং তার বদৌলতে তার ক্লাস প্রেসিডেন্ট হওয়াটা – এক ধরনের জীবন ব্যবস্থার উপর আরেক শ্রেণীর জীবন ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। এটা সম্ভবত একটা ইতিবাচক ঘটনা এবং দাওয়ার ব্যাপারে সহায়ক একটা ঘটনা। এরকম ক্ষেত্রে যদি সত্যিই কোন “লাভ” সনাক্ত করা যায়, তবে সেই “লাভ” অর্জন করতে সময় ব্যয় করা হয়তো উচিত।
এরপরের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ভোট দেয়ার ইস্যু। অক্টোবর/নভেম্বরের দিকে অনেক মসজিদে বা ইসলামিক সেন্টারে গেলে আপনি পেছনের দিকে একটা বিরাট ব্যানার দেখতে পাবেন – যাতে লেখা রয়েছে যে, “ভোট প্রয়োগ করতে ভুলবেন না যেন”। আমরা যারা এর ভিতর পতিত হয়েছি – জন্মসূত্রে অথবা অন্যভাবে – এবং যাদের কাছে সেই কাগজের টুকরাখানা রয়েছে [CITIZENSHIP], আমাদের নিজেদের দুটো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত :
১) ঐ ভোট প্রয়োগ করার কোন ইসলামী কারণ রয়েছে কিনা এবং এমন অবস্থা থাকতে পারে, যেখানে সেরকম কারণ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ যদি এই প্রস্তাব সহ ভোট চায় যে, সে “স্কুল ভাউচারের” ব্যবস্থা করবে – যখন যে কোন বাবা-মায়ের অধিকার থাকবে কোন পাবলিক স্কুল থেকে সন্তানদের সরিয়ে নিয়ে এসে কোন প্রাইভেট (ইসলামী) স্কুলে ভর্তি করার এবং সেই প্রাইভেট স্কুলের খরচের অংশবিশেষ সে ঐ ভাউচার দিয়ে পরিশোধ করতে পারবে। এই ব্যাপারটা বেশীর ভাগ স্টেটেই, এমন কি ধর্মীয় স্কুলের বেলায়ও, সম্ভব – যদি না ওরা এখন নতুনভাবে সচেতন হয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এরকম একটা ব্যাপার যে মুসলিম কমিউনিটির জন্য কল্যাণকর – এটা বুঝতে জিনিয়াস হবার প্রয়োজন হয় না। তাই একজন মুসলিম যদি এ কাগজের টুকরাখানার অধিকারী হন এবং ব্যালটে এ ধরনের একটা ইস্যু উপস্থিত হয় – তাহলে একজন মুসলিমের উপর ওয়াজিব হবে ঐ বুথে যাওয়া এবং ভোট প্রদান করা। কারণ এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পরিষ্কার ভাবে সনাক্ত করা যায়, এমন একটা লাভজনক ব্যাপার রয়েছে।
২) দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে মুসলিমদের অবস্থানটা একতাবদ্ধ হতে হবে। সুতরাং আমরা মাত্র যে উদাহরণ দিলাম, সেই উদাহরণের মত একই পরিস্থিতিতেও, সিদ্ধান্তটা কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে কি মনে করলেন তার উপর ভিত্তি করে নেয়া হবে না। বরং শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিমদের জন্য ব্যাপারটা কেমন হবে এবং আমাদের ভিতর যারা স্কলার রয়েছেন, তাদের চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞানের আলোকে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে সবার কি করণীয় তা ঠিক করতে হবে। এবং তার ভিত্তিতে আমাদের জন্য ভোট প্রয়োগ করাটা যদি যথাযথ বলে সাব্যস্ত হয়, তবে ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি যে জন্য এ বিষয়টার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি তা হচ্ছে এই যে, এসব পরিস্থিতিতে আপনাদের যেন একটা বিভক্ত বা divided অবস্থান না থাকে। কেননা একটা বিভক্ত মুসলিম ভোট প্রয়োগের ফল কপাল ভালো হলে হয়তো শুধু এটুকুই হবে যে, ভোটগুলো বিফলে গেলো, কোন কাজে আসলো না – আর খুব খারাপ যেটা হতে পারে, সেটা হলো এই যে, কুফফার বুঝতে পারবে যে, আমরা বিভক্ত ও দুর্বল। এবং এ থেকে শেষ পর্যন্ত ওরা আমাদের নিয়ে যে খেলায় মেতে উঠবে, সেটা হচ্ছে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা নিজেদের দলে কতজন মুসলিমকে টানতে পারলো, সেই সনাতন খেলা। সুতরাং এমনকি যখন কোন সত্যিকার ইস্যু থাকবে – মুসলিমদের জন্য ভোট দেয়ার সত্যিই যখন একটা কারণ দেখা দেবে – তখনও এই অস্ত্রকে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে প্রয়োগ করতে হবে; কেবল গোটা মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এক একতাবদ্ধ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে [যেটাকে Block Voting বলা হয়, অর্থাৎ সম্প্রদায়ের সবাই একদিকে ভোট দেবে ]।
এব্যাপারে এক্ষেত্রে শেষ ইস্যু যেটা আসবে, সেটা হচ্ছে আমেরিকায় নাগরিকত্বের ইস্যু। আমি যেমন বলেছি: যারা এর ভিতর পতিত হয়েছেন – আমি জানিনা তাদের উপর এক্ষুণি সেটাকে ত্যাগ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা – তবে আজ যদি কোথাও “দারুল ইসলাম” অস্তিত্ব লাভ করে, তবে মানুষের উপর সেখানে চলে যাবার এবং সেটাকে সমর্থন করার বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য হবে। যাহোক, যারা এর ভিতর জন্মগ্রহণ করেননি অথবা দুর্ঘটনাবশত তা [নাগরিকত্ব] লাভ করেন নি – তাদের উচিত তা গ্রহণ না করা – যদি না তাদের কোন আইনি অপারগতা বা জরুরত থাকে। কারণ নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হলে ইসলাম ছাড়া অন্য একটা দ্বীনের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিতে হয়। এর জন্য এমন কিছু ব্যাপারকে সমর্থন করার শপথ গ্রহণ করতে হয়, যার শপথ করা একজন মুসলিমের জন্য অনুমোদিত নয়। মুসলিমদের সার্বিকভাবে বুঝতে হবে যে, আমেরিকার বা এধরনের অন্যান্য দেশগুলোতে নাগরিকত্ব গ্রহণ করাটা তাদের জন্য জায়েজ নয় – যদি না তাদের কোন অপারগতা থাকে বা জরুরত থাকে – এমন জরুরত যেটাকে স্কলারদের দ্বারা শরীয়াহতে “জরুরত” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে [নিজের মনগড়া better living-এর জরুরত তো নয়ই] । আজকের বিষয়টা সম্ভবত যা ছিল, তা নিয়ে আমার এটুকুই বলার রয়েছে। কিন্তু মুদ্রিত বিষয়টা যেহেতু “রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মুসলিমদের সম্পৃক্ততা” ছিল, সেহেতু আমি এখন “রাজনৈতিক প্রক্রিয়া” বা The Political System-এর কথায় যাবো। অর্থাৎ ঐ Political System-এর কথায় যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং যেটা নবী (সা.) এবং তাঁর সাহাবীদের দ্বারা বাস্তবায়িত করা হয়েছে।
ইসলামের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া “ইমামার” [বা ইমামতের] ধারণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় – মুসলিম উম্মার উপরে একজন একক ইমামের ধারণা। ঐ ইমামের ব্যাপারে এই The Imam বা একক ইমামের সংজ্ঞার প্রশ্ন আসবে, যিনি গোটা মুসলিম উম্মাহর ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং তিনি তাদের সকল আইনি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত – তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ব্যাপার উভয়ের সাথে। তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে সকল প্রকারের জুলুম প্রতিরোধ করা, যাদের উপর জুলুম করা হয় তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া এবং এটা নিশ্চিত করা যে, যার যা প্রাপ্য তা যেন সে পায়। মুসলিম উম্মাহর জনগণের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে তাঁর অন্যতম দায়িত্ব – এই ব্যাপারটা in itself একটা বিশাল subject যা নিয়ে [অর্থাৎ, ইসলামের Public Property নিয়ে] অনেক কিছু বলার ও জানার আছে। প্রতিটি মুসলিমের জানা উচিত যে, মুসলিম উম্মার Public Property গুলো কি কি? সেগুলো কোথা থেকে আসে, সেগুলোকে কি ভাবে treat করতে হবে এবং সেগুলো কোথায় ব্যয় করতে হবে। মুসলিম উম্মার সার্বিক [শুধু তাদের ছাড়া যাদের ভিন্নতাকে প্রত্যাখান করা হয়] ইজমার ভিত্তিতে এটা প্রতিষ্ঠিত যে, যখনই তা করা সম্ভব – তখনই ইমামত প্রতিষ্ঠা করাটা আমাদের জন্য ফরজ; যদি বিশেষ অপারগতা না থাকে তবে ইমামত প্রতিষ্ঠা করাটা উম্মার উপর একটা ফরজ।
আমরা সাহাবা (রা.) দের উদাহরণ দেখি। তাঁরা এ ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন বলেই নবীর মরণোত্তর গোসল এবং দাফন বাদ রেখেই তাঁরা ইমাম নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তাঁরা বুঝেছিলেন যে, মুসলিম উম্মার এমন কি ২/১ ঘন্টার জন্যও ইমামবিহীন থাকা উচিত নয় বা একজন শাসকবিহীন থাকা উচিত নয়। এই ব্যাপারটাকে অবজ্ঞা করার কুফলও খুব গুরুতর। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়, যখন তাদেরকে সত্য পথের উপর একতাবদ্ধ করার জন্য কেউ থাকে না। এখানে আমরা ইমামের কাজগুলো বা যোগ্যতা জানতে পারি – প্রথমত মুসলিমদের একতাবদ্ধ করা এবং রাখা – শুধু তাই নয়, তাদের সত্যের উপর একতাবদ্ধ রাখা। এ থেকে আমরা The Imam-এর যোগ্যতার কিছুটা আভাস পাই যে সম্বন্ধে আমরা একটু পরে বিস্তারিত আলোচনায় যাবো।
স্কলাররা অনেক আগে থেকেই এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করে আসছেন যে, মুসলিম উম্মাহ কাকে নিজেদের উপর ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করবে [অথবা ক্ষেত্র বিশেষে কাকে ইমাম পদ থেকে অপসারিত করবে।] এটা হচ্ছে বিদ্যাশিক্ষার একটা ক্ষেত্র – যা আজকের দিনে অনেক অংশেই হয়তো হারিয়ে গেছে – যেমন এই বিষয়ের উপর লিখিত অনেক বইও হারিয়ে গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ঐ সব বইয়ের reference থাকলেও, মূল বইগুলো হয়তো পাওয়া যায় না এবং এটা হচ্ছে এমন একটা বিষয় যা ইসলামের সমকালীন দাওয়া প্রোগ্রাম বা শিক্ষা প্রোগ্রামগুলোতে প্রাধান্য পায় না। যদিও মুসলিম উম্মাহ আজ যে সব প্রধান সমস্যাগুলোর সম্মুখীন – এটা তার অন্যতম।
যারা ইমাম নির্বাচন করবেন, তাঁরা কারা হবেন সে ব্যাপারে কিছু সন্দেহাতীত অনুসিদ্ধান্ত রয়েছে – যেগুলো স্কলারদের ইজমার উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইজমার যে কোন claim বা দাবী তদন্ত করে দেখতে হবে। যখন কেউ ইজমার দাবী করবে, তখন আমরা বেশ বড় সংখ্যক স্কলারদের ইজমা বুঝবো। যাহোক, নির্বাচনকারী কারা হবেন, সে ব্যাপারে প্রথম শর্ত হচ্ছে এই যে, তাঁরা পুরুষ হবেন। স্কলারগণ এ ব্যাপারে একমত যে, ইমাম নির্বাচনের ব্যাপারে মেয়েদের কোন সরাসরি ভূমিকা নেই। দ্বিতীয় যে বিষয়টাতে ইজমা রয়েছে, সেটা হচ্ছে এটা জন সাধারণের হাতে ছেড়ে দেয়ার কোন বিষয় নয়। এটা এমন একটা ব্যাপার নয় যার ব্যাপারে সিদ্ধান্তের দায়-দায়িত্ব বা ক্ষমতা জনসংখ্যাকে দেয়া হয়। বরং এর দায়িত্ব আমাদের ভিতর যারা উলেমা রয়েছেন, বা আরো নির্দিষ্টভাবে যারা “মুজতাহিদ” রয়েছেন, তাদের উপর বর্তায়। মুজতাহিদের কথা যখন আসবে, তখন দুই ধরনের মুজতাহিদের কথা আমরা ভাববো। কেউ কেউ থাকেন যারা সকল বিষয়ে ইজতিহাদের যোগ্যতা রাখেন। আবার কেউ কেউ হয়তো কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ইজতিহাদের যোগ্যতা রাখেন। এই ভিন্নতা একদম সাহাবীদের সময় থেকে চলে আসছে। যেমন অর্থনৈতিক ব্যাপারে মতামত জানতে হলে অন্যান্য সাহাবীরা ওমর বিন খাত্তাবের (রা.) কাছে যেতেন। অন্য কোন সাহাবী হয়তো ওয়ারিশের আইন কানুনের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ইমাম নির্বাচনের ব্যাপারে যাদের ভূমিকা থাকবে তাঁরা হয় সব বিষয়ে মুজতাহিদ হবেন অথবা অন্তত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ, এমন মুজতাহিদ হবেন [ রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা কর্মকান্ডের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ বা আইনজ্ঞ]। আবারো, আমরা নিশ্চিত হই যে, দুটো ব্যাপার এখানে পরিষ্কার: ১)কেবল পুরুষরাই এ ব্যাপারে সম্পৃক্ত হবেন এবং ২)আমাদের ভিতর যারা স্কলার, তাঁরা ইমাম নির্বাচন করবেন, এখানে গণভোটের কোন scope নেই। যে সব স্কলার রাজনৈতিক বিষয়ে অভিজ্ঞ – বিশেষভাবে তাঁরাই এতে অংশগ্রহণ করবেন।
[উপরোক্ত আলোচনাটি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী ধর্মান্তরিত মুসলিম ইমাম সেলিম মরগ্যানের একটি বক্তৃতার অনুবাদ। সেলিম মরগ্যান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের বাসিন্দা। শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে তিনি কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার। রিয়াদের “জামিয়াতুল ইমাম”-এ ইসলামের উপর পড়াশোনা করেছেন, সেখানকার “কুলিয়াতুশ শারীয়াহ্” বা “স্কুল অফ শরীয়াহ্”-তে – তাঁর বিশেষ বিষয় ছিল অর্থনীতি। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের Squaw Valley Islamic Settlement-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সেখানকার মসজিদের ইমাম। আরো জানতে দেখুন:
Click this link… ]
[চলবে…………..ইনশা’আল্লাহ্!]
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মুসলিমদের সম্পৃক্ততা – ২
মূল: সেলিম মরগ্যান
[পূর্বে প্রকাশিতের পর………]
এখন আসা যাক ইমামের যোগ্যতার প্রশ্নে ৷ প্রথমত তাঁর রাজনৈতিক ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে – শরীয়াহর জ্ঞান ৷ দ্বিতীয়ত তাকে অভিজ্ঞ হতে হবে ৷ অভিজ্ঞতা শব্দটির অবশ্য ব্যাপক অর্থ – তবে এর আওতায় এমন অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা আসবে, যার বলে তিনি মুসলিম জনসংখ্যার যাবতীয় বিষয়সমূহ সামলাতে পারবেন বা সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড সমাধা করতে পারবেন ৷ জনগণের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, কেবল তত্ত্বগত বিদ্যা থাকলে হবে না ৷ যেমন তিনি judge বা কাজীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন ব্যক্তি হতে পারেন ৷ আমরা সবশেষে যে গুণটি উল্লেখ করবো সেটা হচেছ ঐ ব্যক্তির পরহেজগারী বা তাকওয়া ৷ কোন ব্যক্তিকে যদি তার নিজের ব্যাপারে বা নিজের শরীর নিয়েই বিশ্বাস করা না যায়, তবে তাকে গোটা উম্মার দায়-দায়িত্ব দিয়ে কিভাবে trust করা যায়! এখানে আরেকটা উল্লেখ করার মত ব্যাপার আছে ৷ কারো ভিতর যদি পরহেজগারী বা তাকওয়ার অভাব থাকে [কিন্তু পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকে] তবে তা কিন্তু তাকে ইজতিহাদ করার ব্যাপারে অযোগ্য বলে সাব্যস্ত করে না ৷ কিন্তু যে ব্যাপারে তার অযোগ্যতা দেখা দেয়, তা হচেছ এই যে, তার ইজতিহাদ অন্যের জন্য গ্রহণযোগ্য হয় না ৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, কোন ব্যক্তি যিনি পরহেজগার নন, তিনিও এমন জ্ঞান অর্জন করতে পারেন যার বদৌলতে তিনি ইজতিহাদ করতে বা শরীয়াহর ruling deduce করতে পারেন ৷ কিন্তু তার চরিত্রের ত্রুটির জন্য তিনি একাই ঐ ইজতিহাদের ফলাফল বাস্তবায়ন করবেন – অন্য কারও উপর সেটা প্রযোজ্য হবে না [অর্থাৎ অন্য কারো তা মেনে চলার কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না]৷
এটা প্রয়োজনীয় নয় যে, যারা ইমাম নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখেন, সে সব ব্যক্তিরা সবাই কোন ব্যক্তির ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে অথবা এটাও অবশ্যকরণীয় নয় যে, ঐ ধরনের ব্যক্তিদের প্রত্যেকের সাথেই পরামর্শ করতে হবে ৷ ন্যূনতম কতজন প্রয়োজন হবে [অর্থাৎ কতজনের সম্মতি থাকলে কোন ব্যক্তিকে ইমাম নির্বাচিত বলে গণ্য করা হবে] সে নিয়ে স্কলাররা লেখা লেখি করেছেন ৷ কোথাও কোথাও ৪০ সংখ্যাটি শোনা যায় – আবার ওমর (রা.)-এঁর হযরত আবুবকর (রা.) কে বায়াত দেয়ার ঘটনা থেকে কেউ কেউ সেই সংখ্যাটাকে ১ বলেও মনে করেন ৷ তবে সত্যি কথা হলো, শরীয়াহ্তে এমন কোন নির্দিষ্ট সংখ্যার সিদ্ধান্ত নেই ৷ তবে আমরা বাস্তবতা থেকে যা জানি, তা হচেছ এরকম যে, সবার সম্মতি যেমন লাগবে না, তেমনি কোন নির্দিষ্ট সংখ্যাও হতে হবে এমন কোন কথা নেই ৷ তবে ন্যূনতম এমন সংখ্যক স্কলার বা উলামা বা গুণিজনের সম্মতি থাকতে হবে [অর্থাৎ এমন সংখ্যক বায়াত নেবেন] যাতে ফিতনা এড়িয়ে যাওয়া যাবে বলে আশা করা যায় ৷ এটা সত্যি যে ওমর (রা.) প্রথমে আবু বকর (রা.) কে একাই বায়াত দিয়েছিলেন ৷ তবে স্কলাররা মনে করেন যে, আবু বকরের ইমামত কেবল ওমর (রা.) যখন বায়াত দেন তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়নি – বরং তা প্রতিষ্ঠিত হয় যখন অন্য সাহাবীরা তাঁকে অনুসরণ করে এগিয়ে আসেন এবং নিজেরাও বায়াত দেন ৷ এটা এমনিতেও বোঝা যায় যে, ওমর (রা.) যদি মনে করতেন যে, একজনের বায়াতই যথেষ্ট, তাহলে তাঁর ঐ মিটিং এ যাবার কোন প্রয়োজন ছিল না ৷ তিনি আবু বকর (রা.)-এঁর ঘরে একা গিয়েই বায়াত দিতে পারতেন ৷
ইমামের গুণাগুণের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে দ্বীনের জ্ঞান ৷ প্রথম কয়েক শতাব্দীতে, যখন এসব নিয়ে অনেক লেখালেখি ও গবেষণা হয় – তখন স্কলাররা মনে করতেন যে, ইমামের একজন মুজতাহিদ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ৷ শরীয়াহ্র সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে তাঁর স্বাধীন যোগ্যতা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ [অর্থাৎ সরাসরি source থেকে conclusion draw করার capability] ৷ দ্বিতীয় ব্যাপারটা হচেছ কাজকর্মের ব্যাপারে স্বনির্ভরতা ৷ এটাও ইজতিহাদের সাথে পাশাপাশি বিচার্য বিষয় ৷ কেননা ইমাম যদি ইজতিহাদ করতে অপারগ হন, তবে তাঁর স্বনির্ভরতা থাকবে না ৷ আর ইজতিহাদে সক্ষম না হওয়া সত্ত্বেও, তিনি যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান, তবে তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে ৷ কেননা তিনি যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান তবে, তিনি জ্ঞান ছাড়া কাজ করবেন – আর তিনি যদি জ্ঞান সমেত কাজ করতে চান, তবে প্রতিটি বিষয়ে তাঁর পরামর্শের জন্য অপরের শরণাপন্ন হতে হবে, যারা তাকে শরীয়াহর বিধি-বিধান ও শর্ত সম্বন্ধে বলে দেবেন এবং সেক্ষেত্রে তাঁর স্বাধীনতা থাকবে না ৷ এধরনের শাসনকার্য efficient হবে না ৷ যদিও ইমাম সবচেয়ে জ্ঞানীদের একজন হবেন এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবার ও কাজ করার যোগ্য হবেন – তবু, তাকে অবশ্যই পরামর্শও করতে হবে ৷ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর উচিত, স্কলারদের সাথে পরামর্শ করে শরীয়াহ মোতাবেক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো [অর্থাৎ শরীয়াহ্সম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো]৷
আমার কাছে মনে হয় ইমামের একটা প্রধান ভূমিকা হচ্ছে স্কলারদের মতামতগুলোকে একত্রীকরণ ৷ এটা সম্ভব নয় যে, তিনি সবার ভিন্ন ভিন্ন মতগুলোকে একটি মাত্র মতে পরিণত করতে পারবেন ৷ না, তা সম্ভব নয় ! কিন্তু পরামর্শের পরে তিনি যে মত দেবেন – সেটা সকলে মেনে নেবেন ৷ ওমর (রা.) যখন তালাকের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নেন যে, কেউ যদি একবারেই তিন তালাক দিয়ে দেয়, তবে তার তিন তালাক দেয়া হয়ে গেছে বলে গণ্য করা হবে – তখন তিনি তালাকের বিধানের উদ্দেশ্যের [মাক্বাসিদ] ব্যাপারে গভীর জ্ঞানের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন – তখনকার পরিস্থিতির আলোকে ৷ তবু এমনটা হওয়াটা খুবই সম্ভাব্য যে, তিনি যাদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন, তাদের কেউ কেউ ভেবেছেন যে, রাসূল (সা.) এর যুগে যেমন এক বসায় কেউ তিন তালাক দিলে, কেবল একবার তালাক দেয়া হয়েছে বলে গণ্য করা হতো তেমন থাকাটাই ভালো ৷ তবু ইমামের সাথে – যিনি একজন মুজতাহিদও ছিলেন – তাঁর সাথে তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত হতে হয়েছিল এবং সকলের উপস্থিতিতে একটা সম্মিলিত অবস্থানে পৌঁছাতে হয়েছিল, যার গুরুত্ব উপেক্ষা করা যায় না ৷ শরীয়াহর বিষয়াবলীতে ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা থাকাটা ক্ষতিকর কিছু নয়, কিন্তু কর্তৃত্বশীল তেমন কারো উপস্থিতি ছাড়া মতপার্থক্য মারাত্মক [[fatal]] চেহারা ধারণ করতে পারে ৷ একতাবদ্ধকারী একজন ইমামের অনুপস্থিতি এমন একটা ব্যাপার, যা আক্ষরিক অর্থে গোটা উম্মাহকে অকার্যকর করে দিতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে সাধারণ মুসলিমদের একটা দিশেহারা অবস্থা হবে – তারা এখানে গেলে একরকম শুনবেন, আবার অন্যত্র গেলে অন্য রকম শুনবেন ৷ ইসলাম কেবল একটা আধ্যাত্মিক ব্যাপার নয় যে, আপনি এক ধরনের ভাবলেন এবং আমি অন্য ধরনের ভাবলাম তাতে কিছুই আসে যায় না ৷ কারণ আমাদের ধর্ম এমন নয় যা কেবল ভাবনা-চিন্তা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ – প্রয়োগ পর্যন্ত যার কোন প্রভাব বা বিস্তৃতি নেই ৷ ইসলাম যেহেতু আমাদের জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেহেতু জীবন চলার পথে, আমাদের নানা রকম পরিস্থিতিতে ইসলামসম্মত এবং শরীয়াহসম্মত পদক্ষেপ কি হবে তা জানতে হবে ৷ এসব বিষয়ে আমাদের মতামত ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু কার্যকলাপের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা এক হতে হবে ৷
স্কলারদের কাজে তারা যে শুধু ইমাম নির্ধারণের ব্যাপারটাই আলাপ করেন তা নয় – বরং ইমাম অপসারণের ব্যাপারেও তাঁরা আলোচনা করে থাকেন ৷ অপসারণের বিষয়টা দুধরনের হতে পারে: প্রথমত, এমন পরিস্থিতি যখন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই কোন ইমাম আর ইমাম থাকবেন না ৷ যেমন ধরুন তিনি যদি পাগল হয়ে যান বা মারাত্মক অদক্ষতার পরিচয় দেন ৷ দ্বিতীয়ত, আবার আরেক ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে যখন একজন ইমামের আচরন ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে পৌছেছে, যখন উম্মাহর মঙ্গলের জন্য তাঁকে অপসারণ করা প্রয়োজন ৷ আমরা এখানে কি পরিস্থিতিতে ইমাম অপসারণ করা প্রয়োজন, তার বিস্তারিত আলোচনায় যাবো না ৷ কিন্তু এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে যে, ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই স্কলাররা এমন একটা সংগঠিত সমষ্টির কথা ভেবেছেন, যারা প্রয়োজনে ইমামকে অপসারণ করবেন ৷ আরেকটা ব্যাপারে এই বিষয়ের উপর গবেষকদের ঐক্যমত রয়েছে: তা হচেছ এই যে, মুসলিম উম্মাহর ইমামকে কোন কারণ ছাড়া অপসারণ করা যাবে না ৷ এটা আধুনিক বিশ্বের শাসন পদ্ধতির চিন্তা-ভাবনার বিপরীতে যায় – যেখানে একজন শাসনকর্তা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নেতা বলে বিবেচিত হন ৷ যার সময় কাল বা term শেষ হলে আরেকজন তার স্থলাভিষিক্ত হন ৷ ইসলামের স্কলারগণ মনে করেন একজন ইমাম [বা খলিফা] যতক্ষণ কার্যক্ষম এবং সুস্থ ততক্ষণ [কোন কারণ ছাড়া] তাকে অপসারণ করা যাবে না ৷ উপরন্তু এসব বিষয়ের উপর নিবেদিত রচনা বা বই-পুস্তক থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামের গণতন্ত্র বা নির্বাচনের কোন ধারণা নেই ৷ ইমামকে সাধারণ মানুষের পছন্দ/অপছন্দের বিষয় করে রাখা যাবে না – সেক্ষেত্রে তিনি স্বাধীনভাবে নিজ কর্তৃত্ব বলে কাজ করতে পারবেন না ৷ আর সেটা ইমামতের উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ করে দেবে [Popular হবার চেষ্টা করা হবে]৷ ইমাম যদি মানুষের ইচ্ছার দাস হন, তবে তিনি মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না ৷ সবাই তাকে অনুসরণ করবে, তিনি অন্যদের অনুসরণ করবেন না ৷ কিন্তু এর সাথে এই concept-এর কোন বিরোধিতা নেই যে, তিনি সকলের সেবা করবেন এবং অন্যের [বা দাসদাসীর] সেবা নেবেন না [He would serve, but he is not to be served]৷ তিনি উম্মাহর সেবা করেন এই অর্থে যে, তিনি নিজের জন্য ঐ পদে আসীন হননি বরং উম্মাহর হাল ধরতে তাকে বেছে নেয়া হয়েছে ৷ কিন্তু একই সময় তিনি উম্মাহর নেতৃত্ব দেন – সেটাকে অনুসরণ করেন না ৷
আরেকটা ব্যাপারে বেশীর ভাগ স্কলারই একমত: সেটা হচ্ছে এই যে, কোন যোগ্যতর ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও, অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে ইমাম বানানোটা অনুমোদিত নয় ৷ এটা যদি সম্ভব হয় যে, অপোকৃত অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে ইমামতের দায়িত্ব দেয়া যায়, তবে তাঁর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে, স্বল্প যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে বাছাই করা যাবে না ৷ ইসলামে দুজন ইমাম থাকাটা অনুমোদিত নয় ৷ কেননা আমরা The Imam বা গোটা মুসলিম উম্মাহর নেতার ব্যাপারে কথা বলছি ৷ এবং এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যা দু’জন ইমাম হবার বিষয়কে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে৷ সুতরাং মুসলিম উম্মাহকে নিজের কর্তৃত্বের দায়িত্ব – একজন নেতার হাতে, অর্পণ করতে হবে ৷ অবশ্য সেটা তা করতে পারার সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল ৷ যখন মুসলিম উম্মাহ তা করতে সক্ষম হবে, তখনই তারা নিজেদের জন্য একজন মাত্র ইমাম নির্ধারণ করবে এবং তার চেয়ে বেশী নয় ৷ তবে যে কোন অবস্থায়ই কোন মুসলিম জনগোষ্ঠী নেতৃত্ববিহীন অবস্থায় থাকবে না ৷ যেমন এরকম যদি হয় যে, মুসলিম উম্মাহর উপর একজন একক ইমাম [The Imam] রয়েছেন ঠিকই – অথচ কোন কারণবশত কোন একটা মুসলিম সমষ্টি পর্যন্ত তাঁর আদেশ-নিষেধ পৌঁছুতে পারছে না, তবে ঐ জনসমষ্টি কিন্তু নেতৃত্ববিহীন অবস্থায় এলোমেলোভাবে থাকবে না ৷ বরং স্থানীয় পর্যায়ে তারা নিজেদের জন্য নেতৃত্ব ঠিক করে নেবে ৷ তাদের এক সাথে ধরে রাখার কেউ নেই বা একতাবদ্ধ রাখার কেউ নেই, বা তাদের মাঝে যারা জুলুমকারী বা পাপাচারী তাদের নিরস্ত করার কেউ নেই – এমন অবস্থায় তাদের থাকাটা অনুমোদিত নয় ৷ তারা নিজেরা নিজেদের মত করে একজন যোগ্য নেতৃত্ব ঠিক করে নেবে যার কাছে তারা নিজেদের সমর্পণ করবে ৷ তা না হলে তারা বিশৃঙ্খল অবস্থায় এমন একটা পরিস্থিতিতে বসবাস করবে, যেখানে অনেক সংশয় এবং অনিশ্চয়তা দেখা যাবে – যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ৷ সে যাহোক যখন Al Imam-এর নিয়ন্ত্রণ কোন জনসমষ্টি পর্যন্ত পৌঁছায় না বা যখন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করে যে Al Imam বলতে কেউ নেই – তখন কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী নিজেদের উপর এমন একজন আমীর নিয়োগ করবে, যার কাছে তারা তাদের নিজেদের মতামত সমর্পণ করবে; মুহাম্মদ (সা.)-এঁর শরীয়াহর সাথে সঙ্গতি রেখে – তারা কি করবে বা কি করবে না সে সব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে – যাঁর আদেশ তারা মেনে চলবে ৷ তবে মনে রাখতে হবে যে, ঐ ব্যক্তি Al Imam নন এবং এটা হচ্ছে একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা ৷ যেমন ধরুন রাসূল (সা.)-এঁর সময় বা খুলাফায়ে রাশেদীনের সময় কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে যাকাত সংগ্রহ করা হতো এবং বন্টন করা হতো ৷ আজ প্রায় কোথাও সেই ব্যবস্থা নেই বলে আমাদের কেউ হয়তো ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নিজেই কাউকে খুঁজে তা দান করি ৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, এটা একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা এবং এটা রাসূল (সা.)-এঁর দেখিয়ে দেয়া সঠিক পদ্ধতিও নয় ৷ আজ যদি আবার কেউ আমাদের সেই আদি ব্যবস্থাপনায় ফিরে যাবার ডাক দেন এবং তা বাস্তবায়ন করা যদি সম্ভব হয় – তাহলে আমরা কিন্তু বলবো না যে, না আমরা যে যার মত নিজেদের যাকাত আদায় করে যাবো! আমাদের বুঝতে হবে যে, মুহাম্মদ (সা.) মূল সুন্নাহর অনুপস্থিতিতে ওটা ছিল আমাদের একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা ৷ একই ভাবে স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ঠিকই – কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আজ যদি আবার গোটা উম্মার নেতৃত্বে একজন ইমামের আবির্ভাব ঘটে, তবে তাঁকে সমর্থন করতে বা তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে আমাদের কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকার উপায় বা অবকাশ নেই ৷
এরকম পরিস্থিতি – যখন এমনকি একটা এলাকাকেও একতাবদ্ধ করা সম্ভব হয়, উদাহরণ স্বরূপ আমরা এখন যেখানে (আমেরিকায়) বসবাস করি – তখন এই মূলনীতিগুলো যেখানেই এবং যখনই সম্ভব প্রয়োগ করা উচিত ৷ যেমন একটু আগে উল্লিখিত ভোটদানের বিষয়টার কথাই ধরুন ৷ আমরা যদি কোন কারণে কোন একটা নির্বাচনে ভোট দিতে যাই, তবে তার পূর্বে আমাদের একটা একতাবদ্ধ ফ্রন্ট হতে হবে ৷ [অর্থাৎ যার যার তার তার ভোটের প্রশ্নই ওঠে না]৷ আমাদের সিদ্ধান্ত শরীয়াহ্র উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং তা আমাদের উলামা ও শায়েখদের [বয়োঃবৃদ্ধদের] পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত ৷ তবে আমরা যদি গোটা আমেরিকারকে একতাবদ্ধ করতে পারার মত কোন ‘আলেম নেতৃত্ব খুজে না পাই, তবু আমরা সবচেয়ে ভালো যতটুকু করতে পারি, সেটুকু করতে চেষ্টা করবো ৷ সেক্ষেত্রে হয়তো স্থানীয় পর্যায়ের একজন একক নেতৃত্বের অধীনে আমাদের মতামত ন্যস্ত করার চেষ্টা করবো ৷ কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্য তবু এটাই থাকতে হবে যে মুসলিম উম্মাহর একজন মাত্র ইমাম বা Al Imam-এর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাই আমরা ৷ সুতরাং সেই লক্ষ্যে কোন একটি [নিশ্চিত] পদক্ষেপ নিতে আমরা কখনো সংশয়ে ভুগবো না এবং গোটা উম্মাহর উপর একজন ইমাম প্রতিষ্ঠার কাজে আমরা যথাসাধ্য কাজ করে যাবো ৷
এরকম পরিস্থিতিতে স্থানীয় ইমামের উপর যে দায়িত্বগুলো বর্তায় সেগুলো হচ্ছে মানুষকে দ্বীনের প্রতি আহবান করা, দ্বীনকে সুরক্ষা করা [preserve], বিদ’আতের বিরোধিতা করা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যে সমস্ত সন্দেহের বা সংশয়ের সৃষ্টি করা হয়, অমুসলিম ভূমিতে এবং মুসলিম ভূমিতেও – সেগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়া ৷ আবারো, সকল বিষয় ইমামতের দিকেই ফিরে যায় ৷ আমরা যখন মুসলিম সংস্থাগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখি – উদাহরণ স্বরূপ CAIR-এর মত একটা সংস্থার কথাই যদি চিন্তা করি এবং তারা যেসব কর্মকান্ডের আয়োজন করে থাকে সেসব নিয়ে যদি ভাবি ৷ যদি মুসলিম উম্মাহর একজন ইমাম থাকতেন ৷ তাহলে কিছু মুসলিম একসাথে মিলে কোন দাওয়াতী অনুষ্ঠান বা ভালো কাজের জন্য কোন প্রোগ্রাম করতে চাইলে বা ম্যাগাজিন বের করতে চাইলে, ইমাম আসলে সে সব কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না বা বাধা দেবেন না – যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা হারাম কিছুতে বা ক্ষতিকর কিছুতে সম্পৃক্ত হবে ৷ কিন্তু একটা অমুসলিম পরিবেশ ও প্রতিবেশে তেমন কিছু একটা করতে হলে তা কোন জ্ঞানী নেতৃত্বের অধীনে করা উচিত – নতুবা সেসব থেকে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে ৷ এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ইসলামী সেন্টারগুলো বিভিন্ন সময়ে ও পরিস্থিতিতে নিজেদের উদ্যোগে মিডিয়ায় গিয়েছে এবং নিজেদের ইসলামের প্রতিনিধি বলে উপস্থিত করেছে ৷ ভালো স্কলাররা যেহেতু মিডিয়ায় যেতে আগ্রহী নন, তাই যখন কোন কিছু ঘটে, তখন রিপোর্টাররা খবর সংগ্রহ করতে সেখানে হাজির হয় এবং মন্তব্য করার জন্য বড়জোর কোন মডার্নিষ্টকে হাতের কাছে পায় ও তাদের কাছ থেকে ইসলাম কি, সে ব্যাপারে ভ্রান্ত কিছু ধারণা লাভ করে ৷ সেজন্য যে কোন দাওয়াত বা প্রচারের প্রচেষ্টা, এদেশে অবস্থিত মুসলিমদের ভিতর থেকে জ্ঞানী নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত ৷
মুসলিমদের নেতাকে শরীয়াহ্র এবং ইসলামের স্কলার হতে হবে ৷ আর তা যদি দুষপ্রাপ্য হয়, তবে অন্তত তাঁকে এমন কোন পরহেজগার ব্যক্তি হতে হবে যাঁর জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে এবং যিনি জানবেন সঠিক জ্ঞান লাভ করতে কোথায় বা কার কাছে যেতে হবে ৷ তিনি দুর্বল হলে, তাঁর উচিত যে কোন সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে ‘আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া এবং নিজের মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত না দেয়া ৷
সাধারণ মুসলিমদের ব্যাপারে এটা অবশ্যকরণীয় যে, তারা কি করবে এবং না করবে সে ব্যাপারে তারা যেন সবসময় স্কলারদের সাথে আলাপ করে নেয় ৷ তাঁরা হচ্ছেন ফতোয়া বা ruling-এর উৎস এবং ইসলামের “রাস্তায় নির্দেশনা ফলক” ৷ তাঁরাই হচ্ছেন এই উম্মার নেতৃত্ব এবং সত্যিকার অর্থে “উলিল আমর”৷ আর তাই মুসলিমদের নেতৃত্বে তাদের একজন থাকা উচিত বা আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে, যদি সম্ভব হয় তবে তাদের মাঝে যিনি শ্রেষ্ঠতম তাঁরই নেতা হওয়া উচিত ৷ আর যদি তা না হয়, তবে মুসলিমদের সকল ব্যাপারে এবং রাষ্ট্রের সকল ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য ইমামের উচিত জ্ঞানীদের এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের পরামর্শ নেয়া ৷ মুসলিমদের উপর যদি কোন ইমাম বা খলিফা না থাকেন, এমন কি আঞ্চলিক পর্যায়েও যদি কোন নেতৃত্ব না থাকেন, তবে কোন অঞ্চলের মুসলিমদের উচিত নিজেদের এই পদ্ধতিতে সংঘবদ্ধ করা ৷ একটা উদাহরণ হচ্ছে বিয়ের ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন যে, কোন মহিলার যদি ওয়ালি না থাকে, তবে শাসক তার ওয়ালি হবেন ৷ এই একটা উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, অসম্পূর্ণ হলেও এবং আদর্শ না হলেও, মুসলিম জনসমষ্টির নেতৃত্ব থাকাটা কত প্রয়োজন ৷ তাই যদি কোন খলিফা না থাকেন এবং আঞ্চলিক পর্যায়েও যদি কোন নেতৃত্ব না থাকে, তবে আমাদের উচিত ছোট পর্যায়ে হলেও একজন নেতার পেছনে সংঘবদ্ধ হওয়া ৷ এটা ঠিক যে একজন ইমামের পিছনে কিছু লোক এবং অপর একজনের পিছনে কিছু লোক সংঘবদ্ধ হওয়ার পরিস্থিতিটা পছন্দনীয় নয় – কিন্তু তবু একদম সংঘবদ্ধ না হওয়ার মত বিশৃঙ্খল অবস্থার চেয়ে ভালো ৷ যদি কোথাও কোন শাসক বা ইমাম আদৌ না থাকেন, তবে স্কলাররা ঐ সমস্ত ব্যাপারগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, যেগুলোর জন্য নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়- যেমন বিয়ে বা যাকাত আদায় করার মত ব্যাপারগুলো ৷ কিন্তু প্রচেষ্টা থাকতে হবে যে, যত শীঘ্র সম্ভব ঐ মুসলিম জনসমষ্টিকে একজন নেতার অধীনে একত্র করতে হবে ৷
[উপরোক্ত আলোচনাটি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী ধর্মান্তরিত মুসলিম ইমাম সেলিম মরগ্যানের একটি বক্তৃতার অনুবাদ। সেলিম মরগ্যান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের বাসিন্দা। শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে তিনি কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার। রিয়াদের “জামিয়াতুল ইমাম”-এ ইসলামের উপর পড়াশোনা করেছেন, সেখানকার “কুলিয়াতুশ শারীয়াহ্” বা “স্কুল অফ শরীয়াহ্”-তে – তাঁর বিশেষ বিষয় ছিল অর্থনীতি। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের Squaw Valley Islamic Settlement-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সেখানকার মসজিদের ইমাম। আরো জানতে দেখুন:
Click this link…]