প্রশ্নঃ স্ত্রীকে খারাপ কাজের সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রী স্বীকার করেছেন যে তিনি এ কাজে লিপ্ত হয়েছেন এবং তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে পরকীয়ায় প্রবেশ করেছেন। এখন সে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিবেন কিনা এমতাবস্থায় যে তার দুইটি সন্তান রয়েছে?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ আসলে এধরনের প্রশ্ন সোশাল মিডিয়াতে না আসাই উত্তম। আমি অনুরোধ করবো আপনাদেরকে যে আপনাদের একান্ত ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্ন থাকলে সেগুলো ব্যক্তিগতভাবেই কোনো ‘আলিমের কাছ থেকে জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। এটি সবচেয়ে উত্তম কাজ এবং তাহলে মূলত সোশাল মিডিয়াতে খারাপ কাজগুলো প্রসার লাভ করবে না বা খারাপ বিষয়গুলো ব্যাপকতা পাবে না। এদিকে আমরা খেয়াল রাখব। আপনি জানতে চেয়েছেন যে আপনার সন্তান রয়েছে এখন আপনি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিবেন কিনা। এ মাস’আলায় ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি পছন্দ করি তাকে তালাক দিয়ে দেয়া। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত আছে যেটি আবু দাউদসহ অন্যান্য সুনানের কিতাবের মধ্যে এসেছে,

ان لي امرأة لا ترد يد لامس قال طلقها قال لا اصبر عنها قال استمتع بها
رواه ابو داود رقم : ٢٠٤٩ والنسائي رقم : ٣٢٢٩

এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলেছেন যে তার এক স্ত্রী আছে সে কেউ তার সাথে খারাপ কাজ করতে আসলে তাকে ফেরত দেয়না অর্থাৎ খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তাকে তালাক দিয়ে দাও। কিন্তু লোকটি বলেছে যে সে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যদি এমনটি হয় তাহলে তুমি তাকে রাখতে পারো। তবে এ হাদিসটি নিয়ে ‘আলেমদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। ইবনুল জাওযী (রহ.) সহ একদল উলামায়ে কিরাম এই হাদিসটিকে মাওদ্বু বা মিথ্যা হাদিস বলেছেন কারণ, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনোভাবেই খারাপ কাজে লিপ্ত, বা পাপাচারে লিপ্ত নারীকে সাংসারিক জীবনে অথবা দাম্পত্য জীবনে সংসারের জন্য রাখাকে অনুমোদন দিতে পারেন না। তাই তারা হাদিসটিকে মিথ্যা বলেছেন। কিন্তু হাফিয ইবনে হাজার তালখিসের মধ্যে এ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। যদি হাদিসটি গ্রহণযোগ্য হয় এবং সেক্ষেত্রে যদি তিনি তাওবা করেন অথবা সংশোধন হোন তাহলে পরবর্তী জীবন তাকে নিয়ে কন্টিনিউ করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছেন এ অবস্থায় এবং যখন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছেন সেক্ষেত্রে আমি মনে করি যে তাকে স্ত্রী হিসেবে আবার গ্রহণ করা উচিৎ হবে না। তাহলে এর মাধ্যমে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ব্যক্তির বংশ এবং সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর মাধ্যমে সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে কারণ পরকীয়া একটি সামাজিক জঘন্য বিপর্যয়। তাই এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। আর ফেসবুকের মাধ্যমে নারীরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার একটি প্রমাণও আমরা পেলাম। এটি আমরা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই যে ফেসবুকের যেই ক্ষতিগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বড় একটি ক্ষতি হচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়। নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে মূলত আযান দিয়ে আমাদেরকে আহবান করা হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি। এ ক্ষেত্রে নারীদেরকে আমরা ফেসবুক ব্যবহারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে বলবো এবং যারা নারীদের হাতে স্মার্টফোন দিয়ে রেখেছেন, উন্মুক্ত অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন, উন্মুক্ত জীবন দিয়ে দিয়েছেন তাদের এই কাজটি শুদ্ধ হয়নি বরং এর মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় তৈরি হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি যদি তাওবা করে প্রত্যাবর্তন করে না আসেন তাহলে তাকে তালাক দিয়ে দেয়াটাই হচ্ছে বিধান এবং উত্তম। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) সহ অধিকাংশ ‘উলামায়ে কেরাম এটিই বলেছেন এবং শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াও (রহ.) এদিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং ঐ হাদিসের বক্তব্যও তিনি গ্রহণ করেননি এবং বলেছেন এ হাদিস শুদ্ধ নয়। তিনি আরো বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনোভাবেই এ বক্তব্য দেননি বা কোনোভাবেই এটি অনুমোদন দিতে পারেন না। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *