প্রশ্নঃ যয়ীফ হাদিস যদি কোনো মাস’আলার সমাধান দিতে পারে, সেক্ষেত্রে সহিহ হাদিস ভিত্তিক কোনো ‘আলেমের ব্যক্তিগত ইজতিহাদ কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ প্রথম কথা হচ্ছে যয়ীফ হাদিস যদি এমন যয়ীফ হয় যে মুনকার পর্যায়ের অথবা যয়ীফ জিদ্দান অথবা এমন হাদিস যেটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ সমস্ত ‘উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে যেটা দূর্বল হাদিস তাহলে এই ধরনের হাদিস দিয়ে কোনো মাস’আলা দেয়া বা মাস’আলার সমাধান দেয়া জায়েয নেই। এক্ষেত্রে সহিহ হাদিসভিত্তিক কোনো ‘আলেমের ব্যক্তিগত ইজতিহাদ যদি হাদিসের উপর নির্ভর করে এবং তরীকাতুল ইজতিহাদ অনুযায়ী হয়ে থাকে তাহলে এটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে যয়ীফ হাদিসের তুলনায়। তবে যদি হাদিসটি এমন যয়ীফ হয় যে, যয়ীফের ব্যাপারে মুখতালাফ বা ‘আলেমদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে অর্থাৎ কেউ কেউ সহিহও বলেছেন অথবা যয়ীফ জিদ্দান না হয়ে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির দূর্বলতার কারণে হাদিসের সনদ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে ‘আলেমরা মতামত দিয়েছেন; কিন্তু যেটি অনেক বেশি যয়ীফ না এবং এই হাদিসের বক্তব্যগুলো শরিয়তের মূল যেই উসূল রয়েছে সেই উসূলেরও পরিপন্থী না এটা সরাসরি হাদিসের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যদি এমনটি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর মানহাজ বা উসূল হচ্ছে তিনি যয়ীফ হাদিসকে ইজতিহাদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। সেক্ষেত্রে যদি কেউ ইজতিহাদ গ্রহণ না করে যয়ীফ হাদিসকে গ্রহণ করেন তাহলে তিনি সেটি গ্রহণ করতে পারেন। এটা তার জন্য নাজায়েয নয়। তবে সেটি যয়ীফ জিদ্দান বা পরিপূর্ণরুপে যয়ীফ হতে পারবে না। এক্ষেত্রে একটি বিষয় তাকে কনফার্ম করতে হবে সেটি হচ্ছে যয়ীফ হওয়ার কারণে হাদিসটিকে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর নির্দেশনা হিসেবে তিনি গ্রহণ করবেন না। বরং, তিনি বলবেন যে একটি যয়ীফ হাদিসে এ ধরনের নির্দেশনা পাওয়া গিয়েছে এই নির্দেশনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে এক্ষেত্রে এই মাস’আলার সমাধান এমন হতে পারে। কিন্তু এটি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর দিকে কোনোভাবেই সম্পর্কিত করা যাবে না। কারণ যয়ীফ হাদিস রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর দিকে সম্পর্কিত করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহর নবী ﷺ এর উপর মিথ্যারোপ করা। কারণ, এখানে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যে যয়ীফ হাদিসটি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন নি এমন হওয়ার। এই কারণেই মূলত ‘উলামায়ে কিরাম এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। এক্ষেত্রে যদি তিনি যয়ীফ হাদিসটিকে গ্রহণ করতে চান তাহলে তিনি হাদিসটিকে উল্লেখ করে এভাবে বলবেন যে একটি যয়ীফ হাদিসে এরকম দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় এটি আমরা গ্রহণ করতে পারি এবং ইজতিহাদের চেয়ে এই নির্দেশনাকে আমরা উত্তম মনে করেছি। তবে ইজতিহাদ যদি কিতাব এবং সুন্নাহ্ অনুযায়ী হয়ে থাকে সেটি যয়ীফ হাদিস থেকে অনেকক্ষেত্রে উত্তম হতে পারে। কারণ, যয়ীফ হাদিসের ক্ষেত্রে মৌলিক যে সমস্যাটি হয় সেটি হচ্ছে হাদিস যয়ীফ হওয়ার কারণে হাদিসের বক্তব্যের মধ্যেও বড় ধরনের বিভ্রাট, বিভ্রান্তি দেখা যায় এবং শরিয়তের যেই মৌলিক বক্তব্য রয়েছে সেটির পরিপন্থী বা বিপরীত বক্তব্যও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাই এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ওয়াজিব। যয়ীফ হাদিস এবং সহিহ হাদিসভিত্তিক ইজতিহাদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ইজতিহাদ গ্রহণযোগ্য হবে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদিসের মৌলিক বক্তব্য যদি শুদ্ধ থাকে সেক্ষেত্রে যয়ীফ হাদিসও গ্রহণ করা যেতে পারে এবং যয়ীফ হাদিসের উপর নির্ভর করে কোনো মাস’আলার সমাধান দেয়া জায়েয হতে পারে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বিভিন্ন ক্ষেত্রে এধরনের বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে তার রেওয়াত থেকে আমরা পেয়ে থাকি। তাই কেউ যদি এই পদ্ধতির অনুসরণ করে থাকেন তাহলে এটি তার জন্য জায়েয রয়েছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *