মুসলিম উম্মাহর বৈশিষ্ট্য
মুসলিম উম্মাহর বৈশিষ্ট্য – ১
السلام عليكم ورحمة الله و بركاته
মুসলিম উম্মাহর বৈশিষ্ট্য
মূল:ড: আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও কল্যাণ বর্ষিত হোক তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)- এঁর ওপর ও সেই সকল লোকদের ওপর যারা কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের পথ অনুসরণ করে।
এই মুসলিম উম্মাহর অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। এর মধ্যে পবিত্র কুরআনের আলোকে মূলত চারটি বৈশিষ্ট্য আমরা দেখব, যে বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা উল্লেখ করেছেন এই হিসেবে যে, তা সবসময় এই উম্মাহর থাকা উচিত বা ছিল বা থাকবে। আমরা দেখব এসব বৈশিষ্ট্য এই উম্মাহ কতটুকু ধরে রেখেছে এবং যদি এগুলো না থেকে থাকে তবে কিভাবে সেগুলো পুনরায় অর্জন করা যায়।
প্রথম বৈশিষ্ট্য – মধ্যপন্থা অবলম্বন
“এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হতে পার।” (সূরা বাকারা, ২:১৪৩)
এই মধ্যপন্থী বা ন্যায়পরায়ণ জাতির ধারণাটি আমরা কুরআনের সর্বত্র দেখতে পাই: যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে ন্যায়বিচারের আদেশ দেন; যখন ধর্মের ক্ষেত্রে চরমপন্থা বর্জনের, ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাহুল্য বর্জনের কিংবা জীবনের কোন ক্ষেত্রে সীমা লংঘন করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন। [উদাহরণ : (সূরা বনী ইসরাইল, ১৭:২৯, ১১০); (সূরা ফুরকান, ২৫:৬৭); (সূরা হাদিদ, ৫৭:২৩) – অনুবাদক]।তাই মুসলিম উম্মাহর পথকে অন্যান্যদের থেকে পার্থক্য করা যায়। এই পথ ডানে বা বামে ঝুঁকে পড়েনা, কোন চরম অবস্থানে চলে যায়না।
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার বালুতে একটি সরলরেখা টানলেন এবং এর ডানে ও বামেও রেখা টানলেন। তিনি প্রথম রেখার দিকে নির্দেশ করে বললেন, এটি তাঁর পথ, সরল পথ। ডানের ও বামের পথ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। ডান ও বামের পথের প্রতিটির মাথায় অবস্থিত শয়তান, লোকদের সেসব পথের দিকে ডাকে।
এই যে পথ বেছে নেওয়া হলো যাতে কোন বাড়াবাড়ি নেই, তা এই উম্মাহর জন্য বিশিষ্ট। বিশিষ্ট এই জন্য যে, ইসলামের বাণী সর্ম্পকে যারা জানতে চায়, তাদের জন্য এখনও তা সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। এজন্য একে বিশিষ্ট বলা হয়নি যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কেবল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই এই পথে চলতে আদশে করেছিলেন, এই পথে মানুষকে ডাকতে বলেছিলেন; প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সকল নবীই এ পথের প্রতি আহবান করেছেন। কিন্তু তাদের (পূর্ববর্তী নবীদের) বাণীর বিকৃতির কারণে, বর্তমানে কেবল চরমপন্থাই অবশিষ্ট রয়েছে যেমন ইহুদী ও খ্রীস্টান ধর্ম।
মূসা ও ঈসা (আ) যে মধ্যপথ শিখিয়ে গেছেন, তা এখন বিলুপ্ত হয়েছে। তাই শুধুমাত্র এই শেষ উম্মতই মধ্যপথ অবলম্বন করে রয়েছে। খ্রীস্টানরা বিশ্বাস করে ঈসা (আ.) ঈশ্বর। তারা ঈসাকে (আ.) স্বর্গীয় মর্যাদায় উন্নীত করেছে, তাঁকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছে। ইহুদীরা তাকে অবৈধ সন্তানের কাতারে নামিয়েছে। এই দুটোই চরম অবস্থান। ইসলামই ঈসার (আ.) প্রকৃত পরিচয় রক্ষা করেছে – তিনি আল্লাহর একজন মহান নবী, কুমারী মাতা থেকে তাঁর জন্ম, তিনি ঈশ্বর নন, তাঁর কোন ধরনের ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিলনা। সন্দেহাতীতভাবে এই শিক্ষাই তিনি দিয়েছিলেন। অন্যরা এর পরিবর্তন করে বিকৃতিতে পৌঁছে গেছে।
তাদের অন্যান্য বিশ্বাসের বেলাও এরকম দেখা যায়। ফেরেশতাদের ক্ষেত্রে খ্রীস্টানরা জিব্রাইলকে (আ.) আল্লাহর অংশীদার বানিয়েছে, তাকে তারা বলে ”পবিত্র আত্মা”। অপরদিকে ইহুদীরা কিছু ফেরেশতাকে শয়তানের পর্যায়ে অবনমিত করেছে। তাদের মতে শয়তানরা অধঃপতিত ফেরেশতা, যারা আল্লাহকে অমান্য করেছিল। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ফেরেশতারা আল্লাহকে অমান্য করেনা, আবার তাদের কোন ধরনের ঐশ্বরিক ক্ষমতাও নেই।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য – সেরা জাতি
কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুসলিমদের সর্বোত্তম জাতিরূপে অভিহিত করেছেন, যদি তারা কিছু শর্ত পূরণ করে।
“তোমরাই (এই দুনিয়ায়) সর্বোত্তম জাতি, সমগ্র মানবজাতির (কল্যাণের) জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।…” (সূরা আলে ইমরান, ৩:১১০)
আল্লাহ আমাদের সেরা বললেও, এই শ্রেষ্ঠত্বের কিছু শর্ত রয়েছে। তা হল:
“…তোমরা দুনিয়ার মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং নিজেরাও আল্লাহর উপর (পুরোপুরি) ঈমান আনবে।” (সূরা আলে ইমরান, ৩:১১০)
যদি আমরা এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হই, তবে আমরা সেরা থাকব না। খ্রীস্টান, ইহুদী প্রভৃতি অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় জাতিগুলো খারাপ কাজের আদেশ দেয়, ভাল কাজে বাধা দেয়। তারা আল্লাহকে বিশ্বাসের দাবীদার হলেও, প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেনা। ক্যাথলিক খ্রীস্টানরা পাদ্রীদের বিয়ে করতে বাধা দেয়, এভাবে তারা ভাল কাজকে নিষিদ্ধ করে। অপরপক্ষে আল্লাহ মদ ও শুকরকে হারাম করেছেন, কারণ এগুলো ক্ষতিকর – কিন্তু তারা তা হালাল করে নিয়েছে।
অনুরূপভাবে, ইহুদীরা নিজেদের মধ্যে সুদ নিষিদ্ধ করে কিন্তু অ-ইহুদীদের সাথে সুদভিত্তিক লেনদেনের অনুমতি দেয়। অথচ যা তাদের জন্য খারাপ, তা সমগ্র মানবজাতির জন্য খারাপ। আল্লাহ-নির্ধারিত “খারাপ” কোন আপেক্ষিক ব্যাপার নয়। যখন আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন, তখন তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই করেছেন, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু লোকের জন্য করেননি। অপরদিকে ইসলামে সেসব বস্তুকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেগুলো মৌলিকভাবেই ক্ষতিকর, তেমনি যা কিছুই উপকারী, সেসব কিছুকেই হালাল করা হয়েছে। এজন্য এই উম্মাহ সূচনালগ্ন থেকেই সমস্ত মন্দকে নিষেধ ও উত্তমকে গ্রহণের ব্যাপারে আদেশ করে এসেছে, এটা এতটাই অধিক মাত্রায় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা অন্যায়/মন্দকে মুনকার অর্থাৎ অজানা ও ন্যায়/কল্যাণকে মা’রুফ অর্থাৎ সুপরিচিত বলে আখ্যায়িত করেছেন, কেননা মা’রুফ কোনগুলো তা মোটামুটিভাবে সর্বজনবিদিত। যদিও আল্লাহ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু জিনিস নির্দিষ্ট করে দিতে হয়েছে, তবুও কোনটা ভালো তা সকলেরই জানা। ভালর উপলব্ধি সকলের অন্তরে প্রোথিত করে দেয়া হয়েছে। যেমনটি কুরআনে উল্লেখ আছে:
“শপথ মানবপ্রকৃতির এবং সেই সত্তার যিনি তাকে বিন্যাস করেছেন। অতঃপর তাকে তার ভালো ও মন্দ কাজের জ্ঞান দিয়েছেন ।” ( সুরা শামস্, ৯১:৭-৮)
সুতরাং ইসলামী ব্যবস্থা কুর’আনের/অহীর আলো দিয়ে এই সচেতনতাকে পথ দেখায়। এই সচেতনতাকে কাজে লাগানো সম্ভব নয়, যদি না কোন পথনির্দেশক ব্যবস্থা থাকে। ইসলাম এই সচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে উপকার লাভের জন্য এক পথের সন্ধান দেয়। সূরা আল-ফাতিহায় ইহুদীদের বলা হয়েছে ‘আলমাগদুবি আলাইহিম’, অর্থাৎ ‘যাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ’, কেননা তারা সত্যকে জানার পরও তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সত্যের প্রতি আহবান করেনি। ইহুদীদের এরকম বলার ব্যাপারে আল্লাহর উদ্দেশ্য কেবল এটা নয় যে, আমরা তাদের সর্ম্পকে খারাপ মানসিকতা গড়ে তুলব, বরং তিনি আমাদের ঐ একই গর্তে পা দেয়ার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছেন। আমরা তাদের মত হব না, যারা ভাল কি তা জানার পরও তার দিকে আহবান করে না ও সেটাকে বাস্তবায়িত করেনা।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য– একক জাতি
“তোমাদের এই যে জাতি, এতো একই জাতি। আর আমি তোমাদের প্রতিপালক, তাই আমার উপাসনা কর।” ( সূরা আম্বিয়া, ২১:৯২)
আমরা একটিই জাতি এই অর্থে যে, আমরা জাতীয়তার দিক দিয়ে ভিন্ন হলেও আমাদের রব একজন। আমাদের ঐক্যের কারণ এই যে, আমরা সকলে আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আমাদের মধ্যে যত পার্থক্যই থাকুকনা কেন, আমরা এই একটি কারণেই একতাবদ্ধ। কুরআনের আয়াতে মু’মিনদের ভ্রাতৃসম বলা হয়েছে:
“নিশ্চয়ই বিশ্বাসীরা পরস্পর ভাই ভাই…” (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আমরা একটি ইমারতের মত যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে তোলে। মুসলিম উম্মাহর একতা সংক্রান্ত এই মৌলিক ধারণাগুলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন এবং তাঁরাও সেইমত চলেছেন এবং পরবর্তী সকলকে এর মর্মাথ পৌঁছে দিয়েছেন।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য– ধর্ম প্রচার ( দাওয়াত)
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা ভালোর দিকে ডাকবে ও সৎ কর্মের নির্দেশ দিবে এবং অসৎকর্মের ব্যাপারেও নিষেধ করবে। আর এসব লোকই হবে সফলকাম।” (সুরা আলে ইমরান ১০৪) [অনুরূপ আয়াত (সূরা আন নাহল, ১৬:১২৫) – অনুবাদক]
ইসলামের বাণী অপরের কাছে পৌঁছে দেওয়া বা দাওয়াত এই উম্মাহর একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, প্রথম থেকেই তাঁর আশেপাশের লোকদের, তাঁর পরিবার ও সমাজের কাছে ধর্ম প্রচার করেছেন এবং এর ফলশ্রুতিতে সেই সমাজ গোটা দুনিয়ায় ইসলামের বাণী প্রচার করেছে।
দাওয়াত হতে পারে মৌখিক আহ্বানের আকারে বা প্রয়োজনে সশস্ত্র যুদ্ধের আকারে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বাণী অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া মুসলিমদেরই দায়িত্ব।
মুসলিম উম্মাহর বৈশিষ্ট্য – ২
মূল: ড:আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস
[পূর্বে প্রকাশতি লেখার ধারাবহিকতায়….]
কিন্তু আজকের উম্মাহ এই চারটি গুণাবলীর কতটুকু ধরে রেখেছে? আমরা কি সেই মধ্যপন্থী জাতি? আমরা কি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছি? বাস্তবে আজকের মুসলিমদের ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের বলা হয় চরমপন্থী। ধর্মীয় ব্যাপারে চরমপন্থী (যে দাবী সত্য বা মিথ্যা হতে পারে); আমাদের মতাদর্শ (অথবা যা আমাদের মতাদর্শ বলে দাবী করা হয়) তুলে ধরার জন্য সহিংসতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে চরমপন্থী ।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা গত কয়েক বছরে যা ঘটেছে তার দিকে দৃষ্টি ফেরাতে পারি। যেমন নিউইয়র্কের হামলার কথা ধরা যাক, যার জন্য মুসলিমদেরকে দায়ী করা হয়েছে। এরকম চরমপন্থা অবলম্বন করায় সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। সবার এখন ধারণা জন্মেছে যে, মুসলিমদের প্রধান উদ্দেশ্যই আমেরিকাকে ধ্বংস করা অথবা আমরা এক বর্ণবাদী জাতি। এই বর্ণবাদের ধারণা দিয়েছেন ফারাখান। ফারাখান এলিজা মোহাম্মদের শিক্ষাই তুলে ধরেছেন, যা কিনা দাবি করে আল্লাহ একজন কালো মানুষ, সকল কালো মানুষই আল্লাহ (নাউজুবিল্লাহ) এবং সব শ্বেতাঙ্গরা শয়তান। এই ধরনের বিকৃত চিন্তাধারাকে ইসলামের নামে চালানো হচেছ। এজন্য একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিক যখন জানতে পারে আমরা মুসলিম, তখন তারা ধরে নেয় আমরা ফারাখানের অনুসারী [অথচ ফারাখানের “ন্যাশন অফ ইসলাম” নির্ভেজাল কুফরের উপর প্রতিষ্ঠিত, যার সাথে “কেবল নামের একাংশ” ছাড়া, ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই – অনুবাদক}।
এখন কিভাবে আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি? প্রথমত আমাদের ইসলামের সঠিক ভাবমূর্তিকে তুলে ধরার জন্য মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। ইসলামের শত্র“রা মিডিয়াকে ইসলামের অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও মিডিয়া আমাদের হাতে নেই, তবুও আমাদের অনেককিছু করার আছে। মিডিয়াগুলো এমনভাবে রুদ্ধ নয় যে, ইসলামের সঠিক তথ্যপ্রচার একেবারে অসম্ভব। মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে যেখানেই সুযোগ আছে টেলিভিশন, রেডিও, খবরের কাগজ, ম্যাগাজিনের সাহায্যে যতদুর সম্ভব এসব বিকৃতি সংশোধন করা। যেসব ক্ষেত্রে ধর্মীয় মূলনীতির ধারকদের মৌলবাদী আখ্যা দেওয়া হয়, সেসব ক্ষেত্রে এই ধর্মীয় মূলনীতিগুলোর পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আমাদের বোঝাতে হবে মূলনীতিগুলোকে আঁকড়ে ধরাই কাম্য, এটি চরমপন্থা নয়। এগুলোই আমাদের সমাজে নৈতিকতার দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলবে। আমেরিকার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, প্রতি যুগেই এখানে নৈতিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, সমাজের নৈতিক কাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষতিকর পরিবর্তন ঘটছে। এর কারণ হচ্ছে খ্রীস্টধর্মের নৈতিকতার মুলনীতিগুলো কেউ তুলে ধরছে না কিংবা চর্চা করছে না। অপরপক্ষে ইসলামের ক্ষেত্রে এর মূলনীতি আঁকড়ে ধরে থাকা কারও পছন্দ অপছন্দের উপর নির্ভর করেনা। সময়ের সাথে সাথে এসব অবিচ্ছেদ্য মূলনীতিগুলো পরিবর্তনীয় নয় [অপরপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিকতার দাবী হচ্ছে নৈতিকতা আপেক্ষিক]। মুসলিমরা কোনকালেই সমকামিতাকে একটি বিকল্প জীবনব্যবস্থা হিসেবে মেনে নেবেনা, কখনও নয়। অবাধ যৌনতা, বিবাহবহির্ভূত সর্ম্পক কখনই ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবেনা। এসব ব্যাপারে আমাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা সবাইকে জানাতে হবে।
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কথা এসমাজে কেউ কানে তুলছে না। কিন্তু আমরা যদি আমাদের অবস্থানে দৃঢ় থাকি তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায় যে, বহু মার্কিন জনগণ একারণে ইসলামকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে। কেননা তারা তাদের সমাজের দুরবস্থা দেখছে এবং প্রত্যক্ষ করছে যে, এই অবস্থা সংশোধন ও নৈতিকতা রক্ষায় খ্রীস্টধর্মের কোন ভূমিকাই নেই। সমাজে যারা এরকম নৈতিকতায় অটল থাকবে এবং সমকামিতার প্রতিবাদ করবে, তারা সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করবে, কারণ, এরকম করা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যুদন্ডের সামিল। কারও সরকারী চাকরি থেকে থাকলে একারণে তাকে সব হারাতে হবে। এজন্য মুসলিমদেরই তাদের অবস্থান রক্ষা করতে হবে এবং সমাজকে তাদের মুল্যবোধের কথা জানাতে হবে। জানাতে হবে যে, এরাই সেই জাতি যারা ভালো কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজে বাধা দেয়। এরাই সেই জাতি যাদের ভালো-মন্দের ধারণা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়না – যা খারাপ তা সবসময়ের জন্য খারাপ, যা ভালো তা সবসময়ের জন্য ভালো।
অবশ্যই এর সাথে সাথে আমাদের একথা তুলে ধরতে হবে যে ঈমানই হচ্ছে সেই সারবস্তু যা কিনা ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেয়ার মূল প্রেরণা জোগায়। আমরা সমাজে প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করি – যে ব্যবস্থায় ধর্ম জীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার, আর এই ধর্মনিরপেক্ষিকরণ প্রক্রিয়াই আজ সমাজের যাবতীয় নৈতিক অবক্ষয়ের উৎস। আমাদের দেখাতে হবে যে, ইসলামী নৈতিক ব্যবস্থা – যে ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার নৈতিক মূল্যবোধ সমাজ কাঠামোর মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে – সেটাই আদর্শ ব্যবস্থা যার জন্য সকলের সংগ্রাম করা উচিৎ। আমাদের দেখাতে হবে খ্রীস্টধর্মের ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ও ইসলামে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা এক নয়। কারণ যারা খ্রীস্টধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে এসেছে, তারা অন্য যেকোন ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এর কারণ হচ্ছে খ্রীস্টধর্মের বিকৃতি, যার ফলে এর অনুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ কঠোর ও পীড়াদায়ক হয়ে পড়েছিল। বিজ্ঞানের সাথে এর বিরোধের কারণে এটি মানুষের মনকে দমিয়ে রেখেছিল ও একটি নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ করেছিল, অথচ প্রকৃত বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। ইসলাম মনকে অবদমিত করেনা, ইসলামের উদ্দেশ্য মনকে মুক্ত করা। এ কারণেই ইসলামী রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল।
এজন্য আমাদের এই নৈতিক অবক্ষয়ের বিকল্প হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত নৈতিকতা এবং ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষার পরিবর্তে সত্য ধর্মের আলোকে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে সমর্থন সৃষ্টি করতে হবে।
কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা এক ভীতিকর চিত্রই দেখতে পাই। ধর্মনিরপেক্ষতা সেখানে আসন গেড়ে বসেছে। সেসব সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ কোন কোন ক্ষেত্রে এমনকি মার্কিন সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধ থেকেও যেন খারাপ হয়ে পড়েছে। তাই সেরা জাতি হওয়ার বৈশিষ্ট্য আমরা হারিয়েছি। বর্তমান মুসলিম উ¤মাহর অবস্থান সর্বনিকৃষ্ট বললে ভুল হবেনা। তারা সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ও দরিদ্র। মুসলিম দেশে এখন পতিতাবৃত্তি, মাদকদ্রব্যের মত দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যায়। ফলশ্র“তিতে এইডস এর মত রোগ, যা কিনা মুসলিমদের মধ্যে ছড়ানোর কথা নয় – কেননা তারা বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকে, তা মুসলিম সমাজে ছড়াচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় মুসলিম দেশগুলোতেই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধাদান এখন অবহেলিত। কেন এমন হচ্ছে? তারা কি আল্লাহকে বিশ্বাস করেনা? আসলে তারা যদিও আল্লাহকে বিশ্বাস করার দাবীদার, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের বিশ্বাসের ধরনের সাথে খ্রীস্টানদের বিশ্বাসের ধরনের বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। হয় তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূজা করছে, তাঁর নিকট প্রার্থনার মাধ্যমে কিংবা তাঁর প্রতি আল্লাহর গুণাবলী আরোপের মাধ্যমে, নয়ত অন্যান্য ওছিলাকে ধরছে। মসজিদের মধ্যে কবরস্থান পাচ্ছে এবং সেখানে আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে। এভাবে আমাদের মূল ভিত্তিই ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ হচ্ছেনা।
এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় মানুষকে আল্লাহর ওপর ঈমানের দিকে ফিরিয়ে আনা। সেরা জাতি হতে হলে আগে আমাদের আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ঈমান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহকে এমনভাবে বিশ্বাস করতে হবে, যেমনটি আসলে বিশ্বাস করা উচিত। যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করে, যদিও তারা নিজেদের মু’মিন বলে দাবী করে, তারা প্রকৃতপক্ষে মু’মিন নয়। একারণেই কুরাইশরা যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রস্তাব দিল তারা এক বছর তাঁর সাথে আল্লাহর এবাদত করবে, যদি তিনি এক বছরের জন্য তাদের দেবতাদের উপাসনা করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তখন বললেন,
“বলো : হে অবিশ্বাসীরা ! আমি তার উপাসনা করিনা যার উপাসনা তোমরা কর।” (সূরা কাফিরুন, ১০৯:১-২)
যেহেতু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজনমাত্র প্রভুর কথা বলেছেন, সেখানে আল্লাহর সাথে আর কারো উপাসনা করা কিছুতেই সম্ভব নয়। যদি কেউ শরীক করে, তবে সে আর “এক আল্লাহর” উপাসক থাকল না। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে বলতে বলা হয়েছিল:
“তোমরাও তাঁর উপাসনাকারী নও যাঁর উপাসনা আমি করি।” (সূরা কাফিরুন, ১০৯:৩)
এজন্য আল্লাহ শ্রেষ্ঠ জাতি তাদেরই বলেন যারা প্রকৃত ঈমানদার। আমাদের উম্মাহকে তাই ঈমান ফিরিয়ে আনতে হবে। এই ভিত্তি থেকেই যথার্থভাবে সৎকাজের আদেশ ও অন্যায়কাজের নিষেধ চলতে পারে।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উম্মাহর ঐক্য। ঔপনিবেশিক শাসন আমলে আমাদের উম্মাহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এরপর আমাদের মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে জাতীয়তাবাদ। ইসলামে জাতীয়তাবাদের কোন স্থান নেই। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর জন্য এই জাতীয় চেতনা এক মর্যাদার ব্যাপার হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকেরই এখন জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় দিবস আছে। সবাই জাতীয় পতাকার প্রতি গভীর ভালবাসা দেখায়। আজ আমি যদি ধরা যাক আলজেরিয়া বা আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের পতাকায় আগুন লাগিয়ে দেই তবে এমনকি সবচেয়ে ধর্মপ্রাণ লোকটাও এতে কষ্ট পাবে। এটা হচ্ছে রোগের লক্ষণ। অন্তরের এই রোগের কারণে তারা ভুলে যায় যে, তারা ইসলামের কাছে দায়বদ্ধ। জাতীয়তাবাদের প্রতি এই গভীর ভালবাসা, এই রোগ অন্তর থেকে দূর করতে হবে, নাহলে উম্মাহর ঐক্য কখনও আসবে না। এ ধরনের অনুভূতিকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।
আমাদের জাতীয়তা হচ্ছে ইসলাম। যদিও আমাদের জন্ম বিভিন্ন দেশে, আমরা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলি, দেখতে বিভিন্ন রকম, কিন্তু এইসব বৈশিষ্ট্য এক পিতা ও এক মাতার থেকেই এসেছে। [“হে মানবসম্প্রদায়, আমি তোমাদের একটি পুরুষ ও একটি নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তোমাদের জন্য জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার…” (সুরা আল হুজুরাত ১৩); অনুরূপ আয়াতসমুহ দেখুন (সূরা নিসা, ৪:১); (সূরা নাহল, ১৬:৯৩); (সূরা মু’মিনুন, ২৩:৫২); (সূরা শুরা, ৪২:৮); (সূরা হুদ, ১১:১১৮) – অনুবাদক ]। একথা আমাদের বোঝা দরকার।
আমাদের ভাষা, মুসলিমদের সাধারণ ভাষা হওয়া উচিৎ আরবী। যখন থেকে আরবীর জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রসার বন্ধ হয়েছে, তখন থেকে অন্যান্য জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এজন্য উপনিবেশ স্থাপনকারী শক্তিগুলো এই প্রসার বন্ধের জন্য অত্যন্ত তৎপর ছিল। উদাহরন দেয়া যায় লেবানন, সুদান প্রভৃতি উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর; যেখানে আরবী মাতৃভাষা ছিল না। যখন ইসলামী শাসন সেখানে কায়েম হল, তখন প্রশাসনিক কাজে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কিছু কিছু আরবী শব্দ মূল ভাষার সাথে মিশে গেল। ক্রমান্বয়ে তারা আরবী হরফে নিজেদের ভাষা লিখতে শুরু করল। এভাবে পরবর্তীতে আরও আরবী শব্দের প্রবেশের কারণে সেই ভাষা ধীরে ধীরে আরবীতে রূপান্তরিত হয়।
আজও কিছু ভাষায় এই প্রক্রিয়ার প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো যখন ক্ষমতা লাভ তখন তারা এসব দেশকে ল্যাটিন হরফে তাদের ভাষা লিখতে বাধ্য করে। এভাবে তারা এসব দেশের ভাষা আরবী ভাষায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করাকে নিশ্চিত করে। মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মালয় ভাষা একসময় আরবী হরফে লেখা হত। আজও সেখানকার প্রবীণরা সেভাবে লিখতে জানে। কিন্তু সেসব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক এখন ল্যাটিন হরফ ব্যবহার করে। অনুরূপ ঘটেছে পশ্চিম আফ্রিকার হাউসা, পূর্ব আফ্রিকার সোয়াহিলি ও তুর্কী ভাষার বেলায় যেসব কিনা আরবী হরফে লেখা হত, এখন ল্যাটিন হরফে লেখা হয়।
তাই আরবীকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। মুসলিম দেশগুলোতে এর তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে। যেখানে সম্ভব আরবীকে প্রথম বা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে চালু করা দরকার। আরবী মুসলমানের জাতীয় ভাষা। আমরা নামাযে আরবী ব্যবহার করলেও ভাব বিনিময়ের সময় তা করিনা। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে বহু লোক আরবী পড়তে পারে। অভিভাবকরা নিজেরা বা শিক্ষক রেখে শিশুদের আরবী তিলাওয়াত করতে শেখায়। কিন্তু এর দ্বারা তোতাপাখির মত আবৃত্তি হয়, কুরআনের অর্থ বোঝা যায়না। সেখানে আরবী দ্বিতীয় ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়না। এর ক্ষতিকর প্রভাবে উম্মাহ বিভক্ত হয়ে গোষ্ঠীবাদ আর জাতীয়তাবাদের জন্ম হচ্ছে। এর আরও বড় ক্ষতিকর প্রভাব হচ্ছে ইসলামী শরীয়াতের মূল উৎস কুরআনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি। তাই মুসলিম সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরবীর কথা খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। এই আরবীই মুসলিমদের ইসলামের দিকে নিয়ে আসবে ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদের চেতনা ও জাতীয়তার প্রতীকের অবসান ঘটাবে।
আমেরিকাতে মুসলিম উম্মাহর দুইরকম গোষ্ঠী দেখা যায়, একটি অনারব অন্যটি আরব। আসলে দুইটি আলাদা গোষ্ঠী না হয়ে একটি হওয়া উচিত ছিল। প্রশ্ন জাগতে পারে, কিভাবে দুই গোষ্ঠী পরস্পর মত বিনিময় করতে পারে? আসলে দুদিকেই সমস্যা আছে যার সমাধান হওয়া দরকার। এই বিভক্তির কারণ শুধুমাত্র ভাষাগত বাধা নয় (একদল আরবী বলে, অন্যদল ইংরেজি)। এর মূলে আছে সংস্কৃতির পার্থক্য। কিন্তু আমরা ভুলে যাই মুসলিমদের সংস্কৃতি অভিন্ন। আমাদের এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন রীতিনীতি থাকতে পারে, কিন্তু সেসব পার্থক্য গুরুতর নয়। অথচ, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মুসলিমদের মধ্যে আমাদের সাধারণ সংস্কৃতির বদলে এলাকাভিত্তিক রীতিনীতিই প্রাধান্য পাচ্ছে। আমেরিকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে এরকম গোষ্ঠীগত বিভেদ থাকলে চলবে না। একজাতির ধারণা মাথায় রেখেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেহেতু আমরা এক আল্লাহকেই সন্তুষ্ট করতে চাই, তাই এর জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে, আরব ভাইয়েরা শহরের উপকন্ঠে বাস করতে পছন্দ করে, তারা সেখানেই মসজিদ বানায়। এসব মসজিদ অধিকাংশ মুসলিমদের থেকে ( যারা শহরের ভিতর বাস করে) দূরে অবস্থিত। অপরদিকে শহরের মুসলিমদের এটা আশা করা ঠিক না যে, তাদের আরব ভাইয়েরা সন্তানদের শহরাঞ্চলের বিপদের (মাত্রাতিরিক্ত অপরাধ, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি) দিকে ঠেলে দিতে চাইবে। তাই মিলিত হবার জন্য একটা মাঝামাঝি বিন্দু বেছে নিতে হবে যা কিনা শহরের কেন্দ্রেও নয় বা একদম শহর থেকে দূরেও নয় । এমন একটা জায়গায় আমরা মসজিদ তৈরি করতে পারি যা মুসলিম সম্প্রদায় গড়ে তুলবে।
আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের অবস্থান বুঝে মুসলমানদের একত্রিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মত্যাগ করতে হবে। শহরের উপকন্ঠের বাড়িগুলো প্রাসাদের মত, সবরকমের সুযোগসুবিধা সেখানে আছে আর শহরের বাড়িগুলো সেই তুলনায় সাধারণ। আমাদের ভেবে দেখতে হবে আমাদের কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কাফেরদের মাঝে প্রাসাদপ্রমাণ বাড়ি না মু’মিনদের মাঝে সাধারণ একটি বাড়ি। আমেরিকায় যেসব মুসলিম ব্যক্তিত্ব খুন হয়েছেন (যেমন ইসমাইল ফারুকী) তারা সবাই শহর থেকে দূরে ইহুদীদের মধ্যে বসবাস করতেন। তাই যখন তারা ছুরিকাহত হয়ে গলা ফাটিয়ে সাহায্য চেয়েছেন, তখন কেউ এগিয়ে আসেনি।
একইরকমভাবে যখন মুসলিম বিশ্বে আমেরিকার জন্য অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটে, এর শিকার হয় মুসলিম এলাকার বাইরে অবস্থিত মসজিদ এবং মুসলিম স্কুলগুলো। আক্রমণকারীরা মসজিদ, স্কুল ভাঙ্গে, কালিমালিপ্ত করে। এজন্য মুসলিমদের একবিন্দুতে এসে মিলিত হতে হবে। যারা আমেরিকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন, তাদের একটি অনুকরণীয় ও বাস্তবসম্মত কর্মপন্থা পরিকল্পনা করতে হবে, যা মুসলিম ও অমুসলিমদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অতএব আমরা যদি জাতীয়তাবাদকে শক্তভাবে মোকাবেলা না করি তবে আমাদের ভোগান্তি চলতেই থাকবে।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য – ধর্ম প্রচার সর্ম্পকে বলা যায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সকল নবী-রাসূল, সাহাবাদের সারাজীবনই কেটেছে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডেকে। এই বৈশিষ্ট্য আজকের উম্মাহর মধ্যে নেই বললেই চলে। যেসব স্থানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু যেমন ভারত (সংখ্যালঘু বলা হলেও সেখানে মুসলিমের সংখ্যা ৮০০ মিলিয়নের মধ্যে ১২০ মিলিয়ন, যা খুব কম নয়) সেখানে সমাজে তাদের কোন ভূমিকাই নেই। ইসলাম প্রচারে তাদের কোন তৎপরতা নেই। ভারতে ভ্রমণ করলে আপনারা মসজিদগুলোকে মৃতপ্রায় দেখবেন। আমি নয়াদিল্লী, হায়দ্রাবাদ, কলকাতা ইত্যাদি শহরে গিয়ে মসজিদে খুব কম লোকই পেয়েছি। মুসলিমরা তাদের চারপাশের হিন্দুদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিচ্ছেনা। হিন্দুদের সাথে তাদের ধর্মবিশ্বাস জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে। তারা তথাকথিত মুসলিম সাধুদের মাজার হিন্দুদের সাথে শেয়ার করে। দুপক্ষই বরকত লাভের আশায় মাজারে যায়। অনেকে বলে থাকেন কেরালা ও অন্যান্য শহরে প্রচুর ইসলাম প্রচার হচ্ছে, কিন্তু আমি যা দেখেছি তাতে বলতে পারি কিছুই হচ্ছে না। সমস্ত মুসলিম বিশ্বে একই অবস্থা। মুসলিম সংখ্যালঘু বা অমুসলিম সংখ্যালঘু হোক না কেন, কোথাও সেভাবে ইসলাম প্রচার হচ্ছে না।
আমেরিকায় ইমিগ্রেন্ট হিসেবে যারা আসছে, তাদের মধ্যেও ধর্মপ্রচারের প্রবণতা খুব দুর্বল। তারা এখানে এসে পড়াশোনা করছে, জীবনযাপন করছে এবং প্রয়োজন শেষে ইসলামের কথা কাউকে না বলে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই শয়তানের দোসররা ইসলামের অপপ্রচার চালাতে সক্ষম হচ্ছে। যারা এদেশে এসেছে, তারা অবশ্যই আল্লাহর কাজে আসেনি। যেসব দেশ থেকে তারা এসেছে সেখানে তাদের জীবনের প্রকৃত মিশন সর্ম্পকে ধারণা দিয়ে বড় করা হয়নি। প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলাম চর্চা করা এবং এর বাণী অন্যদের কাছে পৌছাঁনো। তাদেরকে এই মিশনের চেতনায় বড় করা হয়নি। তাদের কাছে ইসলাম একটি ব্যক্তিগত ধর্ম।
অনেক জায়গায় দেখা যায় কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে মুসলিমরাই তাদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। তারা ভাবে নওমুসলিমরা আসল মুসলিম না, তাদের কোন মতলব আছে। এটা একটা বড় ধরনের ভুল।
এই মুহূর্তে ইসলাম প্রচারের কাজ করছে দেশীয় (মার্কিন) মুসলিমরাই। ইমিগ্রেন্ট মুসলিমের সংখ্যা দেশীয়দের সমান বা বেশি এবং তাদের উপরও সমানভাবে এ দায়িত্ব বর্তায়। তাদের মাঝে এ কথা বলার প্রবণতা রয়েছে যে এ দায়িত্ব আমেরিকানদের, আমরা অবসর সময়ে একটু সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু না, এখানে যারা আছে তাদের সকলেরই এ দায়িত্ব। কারণ কেউ যদি ধর্মপ্রচারে লিপ্ত না থাকে তবে এখানে থাকার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার উপর ভিত্তি করে আলেমরা বলেছেন, যে মুসলমান অবিশ্বাসীদের মাঝে মৃত্যুবরণ করে সে তাদের দলভুক্ত হিসেবেই পরিগণিত।
হিজরত মুসলিমদের জন্য বাধ্যতামুলক। মুসলিম দেশ ছেড়ে কাফেরদের মধ্যে থাকা অচিন্তনীয় ব্যাপার (ব্যবসার জন্য যাতায়াত ও ধর্ম প্রচার ব্যতীত) ছিল। কিন্তু তারা কাফেরদের সাথে থাকে, তাদের বিয়ে করে। এরকমটা আগেরদিনে
চিন্তাই করা যেত না। আজকাল এটা মামুলি ব্যাপার। এই যে যারা ইসলাম প্রচার করতে অস্বীকার করে তাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে অভিসম্পাত করেছেন,
“আমি যেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, মানুষের জন্য পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করার পরও যারা ঐসব গোপন রাখে, আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দেন, আর অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়।” (সূরা বাকারা, ২:১৫৯)
অনেকে মনে করেন, কোন বিদেশী এসে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে না জানানোকেই এখানে গোপন করা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু না, আপনি এখানে থাকেন, কাজ করেন তারপর বাসায় ফিরে যান, বাসে চুপচাপ বসে থাকেন এবং কাউকে ইসলামের কথা বলেন না – একেই বলে গোপন করা।
এখানে এসে আমাদের অনেকেই এদেশের লোকদের মত হয়ে যাই, যাতে লোকেরা আমাদের পার্থক্য করতে না পারে। কিন্তু আমাদের অন্তত চরিত্রের দ্বারা ইসলামের দিকে ডাকা উচিৎ। আমার বক্তব্য রাখার দক্ষতা খুব বেশী না হলেও আমাকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে আমার স্বভাবের দ্বারা, আমি যখন কাজে যাব তখন লোকেরা আমার ও অন্যদের মাঝে যেন পার্থক্য দেখতে পায়। যখন লোকেরা ফালতু গল্প কওে, তখন আমি তাতে যোগ দিইনা; যখন লোকেরা উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করে আমি তাদের সাথে যাই না; যখন নজরদারী করার জন্য বড়সাহেব থাকেন না, তখন আমি অন্যদের মত ঢিল দেই না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মুসলিমরা আরও অধিক অসৎ হিসেবে আবির্ভূত হয়। আপনি অনেক মুসলিম পাবেন যারা সমাজে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতারণা, চুরি সবই করতে পারে। সমাজে উপরে উঠাই তাদের কাছে সাফল্য, অর্থ উপার্জনই তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। মধ্য আমেরিকায় মুসলিমদের “বার্নিং টার্কস” (প্রজ্জ্বলনকারী তুর্কী) বলে ডাকা হয় কারণ যখনই ব্যবসায় মন্দা যায় তারা নিজেরা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে ইনসুরেন্সের টাকা তুলে নেয়। তাদের এই অসৎকাজের জন্য তারা কুখ্যাত।
অথচ ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলিমরা তাদের সততার জন্য পরিচিত ছিল। তারা পৃথিবীর যেখানেই গেছে সেখানেই ইসলামের বিস্তার ঘটেছে। এমন ব্যবসায়ী আপনি কোথায় পাবেন, যে তার পণ্য বিক্রির সময় পণ্যের দোষ বলে দেয়? এমনটি আগে কখনও শোনা যায়নি। এটা দেখে মানুষ অবাক হয় – কিসের জন্য মুসলিমরা এত সৎ! তারা মাপে কম দেয়না, ক্রেতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করেনা। আজকের দিনে মুসলিমদের অনৈসলামিক চরিত্র দেখে মানুষ ইসলাম থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। মুসলিমরা ধর্ম প্রচার করেনা, তাদের এ দায়িত্ব সম্পর্কে তারা মোটেও সচেতন না। তাই সেরা জাতি হবার মত তাদের কোন যোগ্যতা নেই। এজন্য তারা অভিশপ্ত। বিভিন্ন জাতি হামলে পড়ে কুকুরের মত তাদের কামড়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলছে, তাদের ভোগান্তির কোন শেষ নেই।
এরকম করে আমরা কিভাবে আল্লাহর সাহায্য আশা করতে পারি? আল্লাহ পাক বলেছেন “ইন তানসুরুল্লাহা ইয়ানসুরুকুম” – “যদি তোমরা আল্লাহকে (আল্লাহর দ্বীনের) সাহায্য কর, তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন”। আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে আল্লাহর ধর্মের জন্য কাজ করছে? ইসলাম চর্চার জন্য কে চেষ্টা করছে? আমরা মুসলিম হিসেবে এতই দুর্বল যে, আল্লাহর সাহায্য না এলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বরং আমাদের অধিকাংশ মুসলিম ইহুদি আর খ্রীস্টানদের মত মনে করে বেহেশত আমাদের জন্মগত অধিকার। [“আর তারা বলে ,ইহুদি বা খ্রীস্টান ছাড়া কেউ কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবেনা…।” (সূরা বাকারা, ২:১১১) – অনুবাদক]
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” মুসলিমরা এই হাদীসের এইটুকু পাঠ করেই থেমে যায় – সব মুসলিমইতো জান্নাত পাবে, অমুসলিমরা সেখানে যেতে পারবে না। এই কথাটা আমরা বংশপরম্পরায় শুনে আসছি যে, জান্নাতের জন্মগত অধিকার আমাদেরই। কিন্তু এই হাদীসের বাকী অংশে এর সাথে একটি শর্তও আছে: “যারা যেতে অস্বীকার করবে তারা জান্নাতে যাবেনা।” সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, কারা যেতে অস্বীকার করবে?” উত্তরে তিনি বলেন: “যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার আনুগত্য করবে না সে যেতে অস্বীকার করল।”
এটিই হচ্ছে সারকথা। বেহেশত আমাদের জন্মগত অধিকার নয়। যারা আল্লাহর হুকুম মানে তারা বেহেশতের অধিকার অর্জন করেছে। যারা পূর্বেকার সেই ন্যায়পরায়ণ মুসলিমদের মত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবনযাপন করেছে তারা বেহেশতের অধিকারী হবে। এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। [“আপনার প্রতিপালকের শপথ, ঐ লোকেরা অতক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তারা আপনাকে তাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধানকারী হিসেবে গ্রহণ করবে। অতঃপর আপনার দেওয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা সংকোচ না রাখবে এবং তা অবনত চিত্তে মেনে নিবে।” (সূরা নিসা, ৪:৬৫) – অনুবাদক] দুর্ভাগ্যবশত আজকের মুসলমানরা এক ধোঁকার মধ্যে পড়ে আছে, তারা বোঝেনা বেহেশত এমন এক বস্তু যা অর্জন করতে হয় ( ফ্রি পাওয়া যায়না)। ইসলাম এমন এক ধর্ম যা বেছে নিতে হয়। মুসলমানের ঘরে জন্মালেই মুসলমান হওয়া যায় না।
আমি আশা করি ইনশাল্লাহ এই কনফারেন্সের মুসলিমরা আমাদের উম্মাহর বৈশিষ্ট্যগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাবেন। আমাদের একসাথে এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যদেরও এই বৈশিষ্ট্যের কথা জানাতে হবে। আমাদের শুধু এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা তাত্ত্বিকভাবে জানলেই চলবেনা, জীবনে এর বাস্তবায়নও করতে হবে। যদি আমরা এটা না করি, তবে বেহেশতে যাবার কোন অধিকার আমাদের নেই। জান্নাত কারো জন্মগত অধিকার নয়, এ কথাটা আমাদের জানতে হবে এবং আমাদের ভাইবোনদেরকেও জানাতে হবে। একমাত্র তারাই জান্নাত পাবে, যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ – যার অনুমোদন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা দিয়েছেন – তা অনুসরণ করবে।