[হাফিজ ইবনুল কায়্যিমের (রহ.) লেখা থেকে।]

বড় (প্রধান) শিরক-কে চার ভাগে ভাগ করা যায়:

প্রথম প্রকার হচেছ “কামনা-প্রার্থনায় শিরক”, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট প্রার্থনা করা ৷ গায়রুল্লাহকে আনুকূল্য লাভের মাধ্যম, রোগমুক্তির অবলম্বন বা দুঃসময়ে ত্রাণকর্তা রূপে গণ্য করা ৷

দ্বিতীয় প্রকার হল “নিয়তের ক্ষেত্রে শিরক”, অর্থাৎ যে কার্যাবলী আদতে দূষণীয় নয়, তথাপি বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হওয়াতে একান্তভাবে পার্থিব স্বার্থমগ্নতায় দূষণীয় ৷

তৃতীয় প্রকার হল “ভালবাসার ক্ষেত্রে শিরক” – আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও প্রতি সমতুল্য বা সমধিক ভালবাসা পোষণ করা ৷ আল্লাহ বলেন:

আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে…” (সূরা আল বাক্বারাহ, ২:১৬৫)

কোন কোন লোক আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, প্রতিপালক জেনেও গায়রুল্লাহকে আল্লাহর চেয়ে অধিক ভালবাসে ৷ কতিপয় ব্যক্তি আল্লাহর চেয়ে অর্থকে বেশি ভালবাসে আর এ কারণেই এরা যাকাত আদায়ে বিরত থাকে বা অনৈতিক পন্থায় অর্থ উপার্জন করে ৷ তারা দিরহাম বা দিনারের দাস বা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডলারের খরিদকৃত গোলাম ৷

চতুর্থ প্রকার হল “আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরক”, যেমন মানব রচিত আইনকে বৈধ বলে মনে করা যেখানে অনৈতিক বিষয়কে নৈতিক রূপ দান করা হয় ৷ এখানে আমরা তৃতীয় প্রকারের অংশীবাদ নিয়ে আলোচনা করবো ৷

রাসূল (সা.) বলেন:

যে দিনার বা দিরহামের দাসত্ব করবে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধবংস হবে…” (বুখারী শরীফে উদ্ধৃত হাদীসের অংশ বিশেষ) কিছু লোক স্বীয় প্রবৃত্তির তাড়নাকে তাদের রবের চেয়ে অধিক ভালবাসে ৷ প্রবৃত্তির তাড়নায় গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়ার পরিণতিতে আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতায় লিপ্ত হয় ৷ – তুমি কি তাকে দেখেছ যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহরূপে গণ্য করেছে?” (সূরা আল ফুরক্বান, ২৫:৪৩)

সুতরাং আল্লহ এবং তাঁর রাসূলকে সর্বাধিক ভালবাসা হল ঈমানের মাধুর্য আস্বাদনের পূর্বশর্ত ৷ রাসূলের (সা.) একটি সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, তিনটি গুণাবলী যার ভেতরে থাকবে সে ঈমানের তৃপ্তি লাভ করবে: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি সর্বাধিক ভালবাসা পোষণ করা, শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং ঈমান লাভে ধন্য হওয়ার পর কুফরে প্রত্যাবর্তনকে ঠিক সেভাবে ঘৃণা করা যেভাবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে” (আল বুখারী) ৷ আল্লহ্ দুই প্রক্রিয়ায় যাচাই করেন তাঁর প্রতি বান্দার ভালবাসা অন্য সবকিছু অপেক্ষা অধিক কিনা ৷ প্রথম প্রকার হল রাসূলের (সা.) সুন্নাহর অনুবর্তী হওয়া ৷ আল্লাহ বলেন,

“(হে মুহাম্মদ) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন ৷” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৩১)

অতএব, আমাদের জীবনে সকল ক্ষেত্রে রাসূলের (সা.) সুন্নাহর অনুসরণ করা একান্ত বাঞ্ছনীয় ৷

আল্লাহর প্রতি নিখাদ ভালবাসা যাচাইয়ের দ্বিতীয় প্রকরণ হল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ৷ –

বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর, তা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না ৷” (সূরা আত তাওবাহ, ৯:২৪)

চার ধরনের ভালবাসা:

এ প্রসঙ্গে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন:

চার প্রকারের স্বতন্ত্র ভালবাসা রয়েছে ৷ অনেক মানুষই ভালবাসার স্বতন্ত্র রূপ সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় সহসাই বিপথগামী হয় ৷ –

প্রথমত: আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ৷ কিন্তু শুধু এই ভালবাসা তার শাস্তি হতে পরিত্রাণ ও রবের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যথেষ্ট নয় ৷ কারণ মুশরিক, খৃষ্টান, ইহুদী এবং অন্যান্য ধর্মের সকলেই আল্লাহকে ভালবাসে ৷

দ্বিতীয়ত: আল্লাহ যা কিছু ভালবাসেন, তা ভালবাসা ৷ এই ভালবাসা ব্যক্তিকে কুফরের গন্ডী থেকে বের করে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে ৷ যে ব্যক্তি এই দ্বিতীয় প্রকার ভালবাসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক সত্যাশ্রয়ী, সঠিক ও অনুগত সেই আল্লাহর সবচেয়ে অধিক প্রিয়ভাজন ৷

তৃতীয়ত: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তেই কোনকিছুকে ভালবাসা ৷ এটা মূলত আল্লাহ যা ভালবাসেন তা ভালবাসারও একটা অপরিহার্য শর্ত ৷ আল্লাহ যা ভালবাসেন তাই স্বীয় ভালবাসা রূপে গণ্য করা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গতা লাভ করবে না, যতক্ষণ বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তা না করা হবে ৷

চতুর্থত: আল্লাহ ছাড়াও অন্য কিছু সমান্তরালভাবে ভালবাসা এবং এই ভালবাসা অনেকক্ষেত্রে শিরকের সাথে সংশ্লিষ্ট ৷ আল্লাহর সন্তুষ্টি ভ্রুক্ষেপ না করে অন্য কিছুর প্রতি যুগপৎ ভালবাসা তাঁর প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করানোর সমতুল্য ৷ এই ধরনের ভালবাসা মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য ৷

আরও একপ্রকার ভালবাসা রয়েছে যা আলোচনার বিষয়বস্তু বহির্ভূত ৷ তা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভালবাসা – প্রাকৃতিক স্বাচছন্দ্যের প্রতি ব্যক্তির সহজাত স্বাভাবিক ঝোঁক-প্রবণতা ৷ উদাহরণ: তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির পানির প্রতি, ক্ষুৎপীড়িতের খাদ্যের প্রতি টান অনুভব কিংবা স্বতঃর্স্ফূত নিদ্রার প্রবণতা বা আপন স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালবাসা ৷ এই ভালবাসা ততক্ষণ পর্যন্ত নিষ্কলুষ, যতক্ষণ ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি স্মরণ ও ভালবাসা হতে বিচ্যুত না হয় ৷ আল্লাহ বলেন,

মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে…” (সূরা আল মুনাফিকুন, ৬৩:৯)

এমন লোকেরা যাদেরকে ব্যবসাবাণিজ্য ও ক্রয়বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত আদায় করা থেকে বিরত রাখে না…” (সূরা আন-নূর, ২৪:৩৭)

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন:

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালবাসা এবং আল্লাহ ছাড়াও অন্য কিছুর প্রতি যুগপৎ ভালবাসা – এই দু’টোর মধ্যে পার্থক্য বেশ স্পষ্ট ও গুরম্নত্বপূর্ণ ৷ প্রত্যেকেই এই পার্থক্য নিরূপণে দায়বদ্ধ, একান্তভাবে বাধ্য ৷ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে ভালবাসা ঈমানের পূর্ণাঙ্গতার পরিচায়ক, অন্যথায় যুগপৎ ভালবাসা শিরকের উদ্ভাবক ৷
উক্ত দ্বিবিধ ভালবাসার মাঝে পার্থক্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে ভালবাসা আল্লাহর প্রতি ভালবাসার সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্কযুক্ত ৷ আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হৃদয়ে গভীরভাবে প্রোথিত হলে তা তাকে উদ্বুদ্ধ ও চালিত করবে আল্লাহ যা ভালবাসেন তা ভালবাসতে – তখন এই ভালবাসাই হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানকারী ভালবাসা ৷ এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি ভালবাসে নবী, রাসূল, ফেরেশতা ও নিকটবর্তী সৎকমশীলদের, যেহেতু আল্লাহ তাঁদের ভালবাসেন ৷ আর ঘৃণা করে ঐ সব ব্যক্তিদের যারা নবী, রাসূল ও সৎকর্মশীলদের ঘৃণা/অবজ্ঞা করে, যেহেতু আল্লাহ ঐ সকল ব্যক্তিদের ভালবাসেন না ৷ আল্লাহর জন্য ভালবাসা এবং ঘৃণার একটা নিদর্শন হচ্ছে আল্লাহ যাকে ঘৃণা করেন [যেমন কোন অবিশ্বাসী] সে মুমিন ব্যক্তির প্রতি সদ্ভাব প্রকাশ বা সামান্য উপকার বা কিছু প্রয়োজন পূরণ করলেই, তার প্রতি মুমিন ব্যক্তির ঘৃণাভাব তিরোহিত হয়ে ভালবাসায় রূপান্তরিত হবে না ৷ তদ্রূপ আল্লাহ যাকে ভালবাসেন [যেমন কোন মু’মিন], সে যদি অজ্ঞাতসারে ভুলবশত বা সবিস্তারে তাকে বিব্রত বা আহত করে, সেক্ষেত্রেও ঐ ব্যক্তির প্রতি তার ভালবাসা চট করে ঘৃণায় বদলে যাবে না ৷ হতে পারে যে, সে তা আনুগত্যে ও কর্তব্যজ্ঞানে করেছে বা অন্য কোন কারণে হয়ে থাকবে ৷ অধিকন্তু সেই কাজকে ভুল বা অনৈতিক বলে গণ্য করে ভবিষ্যতে সে হয়তো অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসবে ৷

পুরো ধর্ম চারটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত: ভালবাসা, ঘৃণা এবং এতদুভয় হতে উদ্ভূত কর্ম সম্পাদন ও পরিহার ৷ যে ব্যক্তির উপরোক্ত চারটি বিষয় – ভালবাসা, ঘৃণা, কর্ম সম্পাদন ও পরিহার আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হয়, সে ঈমানের পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে ৷ অর্থাৎ তখন সে তাই ভালবাসে যা আল্লাহ ভালবাসেন, আল্লাহ যা ঘৃণা করেন তাই সে ঘৃণা করে এবং আল্লাহ নির্দেশ মোতাবেক কর্ম সম্পাদন ও পরিত্যাগের সীমা মেনে চলে ৷ উপরোক্ত চারটি ক্ষেত্রে যার যতখানি ঘাটতি দেখা যাবে তার ঈমান ও ধর্মের প্রতি সংশ্লিষ্টতা ততই লঘু বলে পরিগণিত হবে ৷

আল্লাহ ছাড়াও অন্য কিছুর প্রতি যুগপৎ ভালবাসা দু’ধরনের, তন্মধ্যে একপ্রকার তাওহীদের মূলনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত তথা শিরক ৷ অন্য প্রকার ব্যক্তিকে ইসলাম হতে খারিজ করে দেয় না তবে তা কতর্ব্যনিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পূর্ণাঙ্গতা অর্জনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ৷

প্রথম প্রকারের উদাহরণ হল দেবতা ও মূর্তির প্রতি মুশরিকদের ভালবাসা ৷ আল্লাহ বলেন,

আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে…” (সূরা আল বাক্বারাহ, ২:১৬৫)

মুশরিকেরা আল্লাহর পাশাপাশি দেবদেবী ও মূর্তিদের সমপরিমাণ ভালবাসে ৷ এই ভালবাসা এবং শ্রদ্ধার সাথে যোগ হয় ভয়, আশা, উপাসনা এবং প্রার্থনা ৷ এ ধরনের ভালবাসা স্পষ্টত শিরক যা আল্লাহর নিকট ক্ষমার অযোগ্য ৷ কোন ব্যক্তির ঈমান পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ সে এই মূর্তিগুলোকে শত্রুজ্ঞান করে তীব্র ঘৃণাবোধ না করবে এবং মূর্তি উপাসকদের উপাসনাকে ঘৃণাকরত তাদের সংশোধনের চেষ্টায় নিয়োজিত না হবে ৷ এই বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ সকল নবীদের প্রেরণ করেছিলেন ৷ তাদের উপরে সকল আসমানী কিতাব নাযিল করেছিলেন ৷ মুশরিকদের জন্য আল্লাহ জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন – যারা তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করায় ৷ আর জান্নাত তাদের জন্য নির্ধারিত, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে মুশরিকদের শত্রুজ্ঞান করে তাদের বিরুদ্ধে চেষ্টা-সংগ্রাম অব্যাহত রাখে ৷ কেউ যদি আরশ হতে নিয়ে পৃথিবীর গহীন অভ্যন্তরে আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুকে সাহায্যকারী রূপে গণ্য করে উপাসনা করে, তবে চরম প্রয়োজন মুহূর্ত শেষ বিচার দিবসে সে তার কল্পিত উপাস্য দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, অস্বীকৃত হবে ৷

দ্বিতীয় প্রকারের ভালবাসা যা আল্লাহ মানুষের নিকট আকর্ষণীয় করেছেন যেমন স্ত্রী, সন্তান, স্বর্ণ, রৌপ্য, চিহ্নিত সুদৃশ্য অশ্ব [এখনকার দিনে দামী গাড়ী], গৃহপালিত পশু এবং উর্বর কর্ষিত জমি – এ সবের প্রতি মানুষের ভালবাসা আকাংঙ্খাতুল্য যেমন খাবারের প্রতি ক্ষুধার্তের এবং পানির প্রতি তৃষ্ণার্তের আকাংঙ্খা ৷ এই ভালবাসাকে আবার তিনভাবে বিশ্লেষণ করা যায় ৷

কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যতে আনুগত্য স্বরূপ উপরোক্ত ভালবাসা পোষণ করে, তবে তা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যমে পরিণত হয় এবং এর বিনিময়ে সে উত্তম প্রতিদান লাভ করবে যদিও সে স্বাচছন্দ্যের উপকরণের মাঝে উপভোগ খুঁজে পায় ৷ এ কারণেই আমরা দেখতে পাই যে, সৃষ্টির সেরা রাসূল (সা.)-এঁর নিকট স্ত্রী ও সুগন্ধী পার্থিব জীবনে প্রিয় ছিল, এ ভালবাসা তাঁকে আল্লাহকে অধিক ভালবাসতে এবং তাঁর বাণী প্রচারে ও আদেশ পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করে ৷

যদি কোন ব্যক্তি প্রকৃতি ও আকাংঙ্খা হেতু উপর্যুক্ত বিষয় সমূহ ভালবাসে, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপরে অগ্রাধিকার না দিয়ে, কেবল ঝোঁক-প্রবণতার বশবর্তী হয় – সেক্ষেত্রে তার জন্য ব্যাপারটা বৈধ হবে, শাস্তিযোগ্য হবে না ৷ তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা অর্জনে কিছুটা ঘাটতি রয়ে যাবে ৷

আর উপরোক্ত পার্থিব সুখ স্বাচছন্দ্য অর্জনই যদি জীবনের মূল উপজীব্য হয় এবং তা আল্লাহর ভালবাসার উপরে তা স্থান পায়, তবে সে অবশ্যই গুনাহে লিপ্ত হয়, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করার মাধ্যমে ৷

পার্থিব উপকরণের প্রতি ভালবাসা পোষণকারীদের ভেতর উপরোক্ত প্রথম দল হচেছ আল সাবিকুন (ইসলামে আনুগত্যে সর্বপ্রথম ), দ্বিতীয় দল আল-মুক্বতাসিদুন (যারা গড়পড়তায় মধ্যম), তৃতীয় দল আল-জালিমুন (গুনাহগার)৷

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *