[এর আগের পর্বটা রয়েছে এখানে:  বলুন তো এটা কোন দেশ – শেষ অধ্যায়(১) ]

লেখাটা যখন শুরু করি, তখন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে কথা বলবো তা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি। তবু, কথায় কথায় অনেক কথা বলা হয়ে গেলো! চলুন, আবার আরবদেশের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আরবদেশ সম্বন্ধে আমি তেমন খারাপ কিছুই বললাম না। প্রশ্ন থেকে যায়: আরবদেশ থেকে তাহলে ইথারে এত Bad News ভেসে/বয়ে আসে কেন? “যাহা রটে, তাহা কিছুটা বটে” সেটাতো রয়েছেই – আর কোথাও কি কোন information gap থেকে যায় তাহলে? এই ব্যাপারে, নিজে এই ব্লগের ব্লগার নন – এমন একজন মুসলিমাহ্ আগেই তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন নীচে লিংক দেয়া দু’টি পর্বে:

 

আমি Bad News-এর কারণ হিসাবে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই:

১) প্রচার প্রচারণায় মুসলিমরা সব সময় খারাপ হবারই কথা – প্রচার, প্রপাগান্ডা, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি সঙ্গত কারণেই ইসলামের সাথে ঠিক যায় না! মরুর প্রাচীর পেরিয়ে তাই ভালো খবরগুলো হয়তো তেমন একটা এপাশে আসে না। এছাড়া আমরা সে দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র আর জনসাধারণকে অনেক সময়ই একাকার করে ফেলি। আমাদের বোঝা উচিত যে, আল্লাহকে চূড়ান্ত বিধানদাতা মনে করা সত্ত্বেও, সৌদী আরব তথাপি একটা Nation State। রাষ্ট্রযন্ত্র সৌদী উলামার (অর্থাৎ আলেমদের) মতকে/কথাকে যথেষ্ট মূল্য দিলেও, দেশটার সবকিছু উলামার ইচ্ছামত চলে না। সৌদী রাজ পরিবার বলতে সুষম কোন জনসমষ্টি বোঝায় না। রাজপরিবারের সদস্যদের ভিতর তাহজুদে অশ্রুবিসর্জনকারী পরহেজগার যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি মোনাকোর মন্টি কর্লোতে বারবণিতার বাহু সংলগ্ন হয়ে ঘুমানো “রাজপুত্র”ও পাওয়া যাবে। তবু, এখনও প্রতিদিন কোটি কোটি রিয়ালের ব্যবসায় করা Bin Dawood বা Hyper Panda-র মত মেগা-শপগুলো ব্যবসাকালীন সময়ে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য বিরতী নেয়/দেয়; এখনও জুয়েলারি দোকান খোলা ফেলে রেখে মানুষ সালাতে যায় নির্দ্বিধায়! মসজিদ মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনের কেন্দ্রবিন্দু – কথাটা এখনো সৌদী জনপদে ভুলে থাকা যায় না। গত শীতে বেড়াতে গিয়ে আমরা Jizan থেকে, লোহিত সাগরে অবস্থিত পর্যটকদের প্রিয় Farasan Island-এ গিয়েছিলাম। একরাত থেকে পরদিন সকালে যখন ফেরীতে উঠতে যাবো, এমন সময় জানলাম যে ওয়েটিং লিস্টে থাকা আমাদের গাড়ীটার শেষ পর্যন্ত ঐ ফেরীতে জায়াগা হয়নি। আবার টার্মিনালে ফিরে এসে দুপুরের ফেরীতে গাড়ীর জায়গা করে নেবার জন্য অপেক্ষা করতে হলো। আমাদের মত “ধরা খাওয়া” আরো কিছু যাত্রী ছিলেন। এছাড়া সকাল গড়িয়ে যতই দুপুরের কাছাকাছি যাচ্ছিল, ততই টার্মিনালের ওয়েটিং লাউঞ্জে ভিড় বাড়ছিল। এক সময় যোহরের সময় হলো। আমার ধারণা ৭/৮ বছরের উপরে যাদের বয়স, তাদের শতভাগই সালাত আদায় করলেন সেখানে। ওখানে একটা “মুসোল্লা” বা নামাজের স্থান ছিল। একবারে সকলের জায়গা হয় না বলে, একের পর এক জামাত হতে লাগলো।
সৌদী আরবে আরো যে কয়টি ব্যাপার দেখে/বুঝে অভিভূত হয়েছি তার একটি হচ্ছে মেয়েদের privilege । পশ্চিমা জগতের অনেকেই যেখানে সৌদী মেয়েদের “বন্দী-দশা” থেকে মুক্তি দেবার জন্য উদগ্রীব, সেখানে সকল পাবলিক SPACE-এ মেয়েদের অগ্রাধিকার ঈর্ষনীয় পর্যায়ের – বিশেষত উঠতি বয়সী সৌদী ছেলেদের নিজেদের কখনো যদি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে হয়, তাতে অবাক হবার কিছু নেই। একজন কালো বোরকা পরা নেকাবওয়ালি (কালো বোরকা ও নেকাব বাইরে বেরুবার জন্য সৌদী মেয়েদের জাতীয় পোষাক) মেয়েকে পাশে বসিয়ে, আপনি হাইওয়ে ধরে গোটা সৌদী আরব নির্বিঘ্নে গাড়ী চালিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন – প্রতিটি হাইওয়োতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চেকপোস্ট থাকলেও কেউ যে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না, তা প্রায় নিশ্চিত! শপিং মলে, এয়ারপোর্টে, খাবারের দোকানে, পার্কে, ফেরীতে – সবখানে যেন Ladies First কথাটা প্রযোজ্য! শুধু তাই নয়, এমন অনেক SPACE রয়েছে, যেখানে কন্যা-জায়া-জননী সাথে না থাকলে, একজন একাকী পুরুষের প্রবেশাধিকারই থাকবে না! এছাড়া কোথাও কোন বিলবোর্ডে একটি নারী অবয়ব না দেখেও প্রায় ১৫০০০ কিলোমিটার ভ্রমনে ৪০ দিন সময় পার হয়ে গেছে ভাবতে অবাক লাগে – ঢাকা শহরে যেখানে একটি প্রায়-নগ্ন, অর্ধ-নগ্ন, বা ইঙ্গিতবহ নারী-প্রতিকৃতি না দেখে ১ কিলোমিটার রাস্তা পার হওয়া মুশকিল! যারা গয়না বা হীরা-জহরতের বিজ্ঞাপনে সবখুলে দেয়া নারী প্রতিকৃতিকে প্রগতি বলে আখ্যায়িত করে থাকেন, তারা হয়তো আমার বর্ণনা শুনে সৌদী আরবের নাগরিকদের করুণা করবেন!
সৌদী আরব সম্বন্ধে আরেকটা ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয় – সেটা হচ্ছে ওখানকার বিচার ব্যবস্থা। সৌদী আরবে বিচারক হন কেবল বড় মাপের আলেমরা – যেমন ধরুন মদীনার মসজিদ নববীর ইমাম/খতীব সালাহ্ আল বুদাইর একজন বিচারক। সৌদী বিচার ব্যবস্থায় একজন সাধারণ মানুষের সুবিচার পাবার সম্ভাবনা যতটুকু, অন্য বিচার ব্যবস্থায় তা হওয়া সম্ভব নয়। আইনের প্রক্রিয়ার মারপ্যাচে আর ব্যয়বহুলতায়, সাধারণের সুবিচার পাবার সম্ভাবনা অনেক সময়ই ক্ষীণ হয়ে যায়। নীচের খবরটা একটু খেয়াল করে দেখুন:
Man gets jail, lashes for beating up mom

MAKKAH — The penal court in Makkah sentenced a man in his 30s to five years in prison and 2,400 lashes at a public place for beating up his mother inside his car while taking her from Al-Laith to Makkah. Presiding judge Turki Bin Dhafer Al-Qarni said the man broke his mother’s tooth, causing her gums to bleed. When they arrived at a checkpoint, the hapless mother pleaded for help from the policemen. The son was taken into custody and the Red Crescent was called to take the mother to hospital.

সূত্র:
view this link

আমাদের একটা ছোট্ট ই-মেইল গ্রুপ আছে, যেখানে এক ভাই উপরের খবরটা তুলে দিয়ে নীচে তার বক্তব্যে লিখেছিলেন:

….They know that, if nobody is there to take care of them – the Qadhi i.e. the State will ultimately ensure their safety and security. That’s why you see a tyrant son could not slip past a highway police check-post after hitting his mother and eventually ends up in jail. I can imagine the old haggard mother could have been extremely irritating, cheeky and demanding – despite that, the Qadhi considered her to be a MOTHER – being a MOTHER was enough there. Can you imagine a mother going to police in BD demanding her right just on one point – she gave birth to her son!! …..

২) আমাদের দেশ থেকে যারা ঐ দেশে কাজ করতে যান, তাদের বেশীরভাগই শ্রমজীবী মানুষ। তারা অনেক ক্ষেত্রেই এদেশের এবং ঐ দেশের “আদম ব্যাপারী’দের হাতে নিগৃহীত হয়ে থাকেন। মানুষ যাদের কাছে commodity তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট শ্রেণীর জীব হবারই কথা। শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা তাই অনেক সময়ই খুবই বেদনাদায়ক হয়ে থাকে। ঐ দেশের আদমব্যাপারী বা “রক্ত-চোষা” শ্রেণীর মানুষদের সাথে শ্রমজীবী অসহায় মানুষগুলোর লেন-দেন বা আদান-প্রদানের গল্পগুলো যখন আমরা পড়ি, তখন মনে হয় গোটা দেশটাই বুঝি ওরকম। অথচ, ঐ দেশে থাকা শ্রমজীবী মানুষদের মাঝে যাদের ওখানকার অভিজাত বা দ্বীনদার সাধারণ মানুষদের সাথে মেলামেশার সুযোগ রয়েছে, তাদের impression জানলে মনে হবে আমরা বুঝি ২টা ভিন্ন দেশের গল্প শুনছি।

৩) পেশাজীবীদের যারা ঐ দেশে অনেকদিন বসবাস করেন, খুব দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তারা আরবদের সাথে মেশেন না বরং নিজেদের একটা “ক্ষুদে দেশ” সৃষ্টি করে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তারা এখান থেকে নাটক, গান, সিনেমা, পরচর্চা/পরনিন্দার অভ্যাস, দলাদলি, কোন্দল ইত্যাদি লটবহর হিসবে নিয়ে যান এবং সে সব সংগে করে নিয়েই আবার ফিরে আসেন। ফলে দেখা যায় ইসলামের জন্মভূমিতে দীর্ঘ দিন কাটিয়েও তারা সেখান থেকে কোন benefit নিতে পারেন না। কিছু কেতাবী হজ্জ্ব/উমরাহ্ পালন করলেও, অনেকে শুদ্ধভাবে সালাত/নামাজ আদায় করাটাও শিখে আসেন না! সুতরাং সৌদী জীবনব্যবস্থা বা গণসাধারণের জীপন-যাপন সম্বন্ধে তাদের অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান একেভারেই ভাসা ভাসা বা অগভীর হয়ে থাকে!

এবার আরো কিছু ছবি দেখুন তাহলে:

1

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৭৯০০ ফিট উপরে অবস্থিত “আবহা” শহরের পাশে সুদাহ জায়গাটা দেখে আমরা যখন গাড়ীতে উঠেছি ফিরে আসার জন্য, তখন উৎসাহী বানরেরা এসেছিল আমাদের দেখতে।

 

2

আমরা জিযানের সমুদ্র বন্দর ছেড়ে যাচ্ছি ফারাসান আয়ল্যান্ডের উদ্দেশ্য

 

3

ফারাসান আয়ল্যান্ডের সূর্যোদয়

 

4

আল উলা

 

5

ফারাসান আয়ল্যান্ডের জনৈক মুক্তা ব্যবসায়ীর বাড়ী – এখন পর্যটকদের দেখার স্থান

 

6

ফারাসান আয়ল্যান্ডের পথে ফেরীতে

 

7

“মাদাইন সালিহ”র পুরাকীর্তি

 

8

আবহার পার্শবর্তী এলাকায় খাড়া “ক্লিফ”

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *