وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

প্রশ্নঃ কিভাবে আমরা আখিরাতমুখী হতে পারবো বা কোন পদ্ধতির অনুসরণে আমাদের আখিরাতমুখীতা সহজ হবে?

উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ আখিরাতমুখীতা এবং দুনিয়া থেকে বিমুখ হওয়ার বিষয়টি ইসলামী শরীয়তে যেভাবে আমরা বিবেচনা করে থাকি বা যেভাবে আমরা উল্লেখ করে থাকি ব্যাপারটি আসলে এমন নয়। আখিরাতমুখীতা বা আল্লাহমুখীতাকে ইসলামী শরীয়াতে “আয যুহুদ” বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ আয যুহুদকে তাসাউফ এর সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন যেটি সঠিক নয়। তাসাউফ এবং “আয যুহুদ” দুটি ভিন্ন বিষয়।

“আয যুহুদ” হচ্ছে কোনো ব্যক্তি আখিরাতকে প্রাধান্য দিবে দুনিয়ার কর্মকাণ্ড বা ব্যস্ততার উপর। এ বিষয়ে ‘আলিমগণের কিছু মতামত আমরা উল্লেখ করতে পারি। যেমন,
ইমাম সুফিয়ান আস সাওরী (র.) বলেন, الزهد هو قصر الامل “যুহুদ হচ্ছে নিজের আশাকে অধিক লম্বা না করে সীমিত করা”। সুতরাং যত বেশি আল্লাহর বান্দা তার আশা বা ইচ্ছা বা মনের কামনাবাসনাকে সংক্ষিপ্ত করতে পারবেন ততই তিনি যুহুদ করতে পারবেন। এ বক্তব্য ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (র.) ও যুহুদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। মাদারিফুস সলেক্বীনের মধ্যে ইবনুল ক্বাইয়ূম (র.) শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া থেকে উল্লেখ করেছেন যেটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সংজ্ঞা الزهد هو ترك ما لا ينفع في الآخرة “যে কাজটি আখিরাতের জন্য উপযোগী নয় সেটি পরিহার করা বা বর্জন করাই মূলত যুহুদ। যুহুদ বলতে এটা বোঝায় না যে আমরা দুনিয়াকে পরিহার করবো বা দুনিয়ার মাল বর্জন করবো। এটা মূলত যুহুদ না।” অনেকে এভাবে ধারণা করাতে আখিরাতমুখীতা বা দুনিয়াবর্জন করাকেই মনে করেছেন যুহুদ। তাই একদল লোককে দেখা যায় যারা তাসাউফ বা সুফিবাদে অথবা বৈরাগ্যবাদে বিশ্বাস করে থাকেন তারা যুহুদকে এটিই মনে করে থাকেন যে দুনিয়াবিমুখ হয়ে আখিরাতমুখী হওয়া। দুনিয়াবিমুখ হয়ে আখিরাতমুখী হওয়াটি ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী। ইসলাম এই যুহুদের দিকে মানুষদেরকে উদ্বুদ্ধ করেনি। এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে আমরা আখিরাতমুখী হবো:-

১. হারাম কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করা।

২. আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন থেকে বিমুখ করে বা আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এমন কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করা। এর জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে তিনি বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করবেন। রসূলুল্লাহ্ (স.) বলেন, الا فزروها فانها تذكركم الآخرة “তোমরা কবর যিয়ারাত কর, কারণ কবর যিয়ারাত তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।” আসলেই আমরা যখন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করবো, জানাযায় অংশগ্রহণ করবো, কবর যিয়ারাত করবো তখনই আমাদের স্মরণ হবে যে এই অবস্থার মুখোমুখি আমাকেও একদিন হতে হবে। তখন আমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ হবে।

৩. মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা। রসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, أكثروا ذكر هادم اللذات “তোমরা সমস্ত স্বাদ-আহ্লাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ কর।” মৃত্যুই মূলত মানুষদেরকে সকল প্রকার দুনিয়ার বিনোদন, স্বাদ-আহ্লাদ, উল্লাস ইত্যাদি থেকে সতর্ক করে দেয় যে আমরা যেটি করছি এটি আমাদের জন্য সঠিক কাজ নয়।

৪. সালাফে স্বলেহীনের জীবনাদর্শ বেশি বেশি চর্চা করা। সালাফে স্বলেহীন যেভাবে জীবনযাপন করেছেন যদি সেটি আমরা জানি বা অধ্যয়ন করি তাহলে আমাদের মধ্যে আখিরাতমুখীতা আসবে।

৫. অধিক পরিমাণে দুনিয়ার আনন্দ বা বিলাসিতার মধ্যে নিজেকে লিপ্ত না করা। অনেকের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি দেখা যায় যে দুনিয়ার আনন্দ, উল্লাস, বিনোদন ইত্যাদির মধ্যে এমনভাবে ডুবে যান যে আখিরাত বা আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন সম্পর্কেও তার চিন্তা করার সময় থাকে না। এ ধরণের অবস্থা যখন কারো মধ্যে এসে যায় তখন তার অন্তরের মধ্যে মূলত ক্বাসওয়া এসে যায় বা অন্তরের মধ্যে কাঠিন্যতা এসে যায় বা অন্তর শক্ত হয়ে যায়। অন্তর কঠিন হয়ে গেলে তখন সে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে আখিরাতমুখী হতে পারেন না। এজন্য রসূল (স.) বলেছেন, لا تكثر الضحك فان الضحك يميت القلب “তোমরা বেশি হেসো না”।

এগুলো যদি আমরা ঠিকভাবে মেনে চলতে পারি তাহলে আমরা আমাদেরকে আখিরাতমুখী করতে পারবো। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সবাইকে আখিরাতমুখী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

والسلام عليكم ورحمة الله و بركاته

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *