প্রশ্নঃ ইসলামী জ্ঞান অর্জনের নীতিমালা বিষয়ে দিক নির্দেশনা চাচ্ছি।

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ প্রথমত, ইসলামী জ্ঞান অর্জন করতে হলে আপনাকে আগে প্রাথমিক যেই বইগুলো রয়েছে সেগুলো স্টাডি করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কুরআন বুঝার জন্য চেষ্টা করা এবং আরবী ভাষা জানার চেষ্টা করা। কারণ, আপনি যত বেশি আরবী ভাষা জানতে পারবেন তত আপনার কুরআন এবং হাদিস বুঝা সহজ হবে। এরপর যদি আপনি স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক যেই বইগুলো আছে সেগুলো পড়ার জন্য চেষ্টা করেন তাহলে আপনি জ্ঞান অর্জনের পথে দ্রুত অগ্রসর হতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি হাদিসের প্রাথমিক কিতাবগুলো পড়তে পারেন, মিশকাতুল মাসাবিহ পড়তে পারেন, রিয়াযুস স্বলেহীন, বুলুগুল মারাম এই বইগুলো পড়তে পারেন। কুরআনের তাফসীরের মধ্যে শুরুতে আপনি তাফসীরে জালালাইন পড়তে পারেন এবং আরো সহজ যেই তাফসীরগুলো বাংলা ভাষায় অনুদিত হয়েছে সেগুলো পড়তে পারেন। তবে আপনাকে বেশি বেশি পড়তে হবে এবং পড়ে আপনাকে যেটি সঠিক সেটি জেনে নেয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তবে ফরয জ্ঞানের প্রতি আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে অনেক বেশি। আর সেটা হলো আপনার জন্য যে কাজগুলো ফরয সে কাজগুলোর জ্ঞান অর্জন করাও আপনার জন্য ফরয। ফরয জ্ঞানের মধ্যে সব কিছুর প্রথমে আসবে তাওহীদের জ্ঞান। তাওহীদের জ্ঞান আপনার জন্য অর্জন করা বাধ্যতামূলক। কারণ তাওহীদ যদি আপনার বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে মূলত কোনো কাজই আপনার আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা দেখি অনেকে শুরুতে তাওহীদের জ্ঞান না নিয়ে অন্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার জন্য চেষ্টা করেন; এটি সঠিক নয়।

২. আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের ফরযকৃত জ্ঞানঃ আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন আপনার জন্য যে কাজগুলো ফরয করেছেন সেটির জ্ঞান অর্জন করতে হবে যার শুরুতেই আসবে সলাতের জ্ঞান। তাই সলাতের মৌলিক যে জ্ঞানগুলো রয়েছে সেগুলো আপনাকে অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। সলাতের মৌলিক জ্ঞানগুলোর মধ্যে ত্বহারাত ও সলাতের অন্যান্য বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়ের জ্ঞানঃ ইসলামকে যে কাজগুলো নষ্ট করে দেয় সেগুলোকে আপনার জানতে হবে। যেমন, শিরক, বিদ’আত, কুসংস্কার, এমন বিষয় ইসলামের নামে প্রচলিত হয়ে গিয়েছে যেটি মূলত শিরকি কাজ এধরনের বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অন্যথায় আপনি পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন। এ বিষয়গুলোর জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা অনেকেই ইসলামের নামে পীর-ফকীর, দরগাহ্-খানকাহ্ ইত্যাদির কাছে নিজেদের ঈমান বিক্রি করে দিয়ে থাকি এমনকি বানরওয়ালা বানরের খেলা দেখিয়ে আমাদের ঈমান বিনষ্ট করে দিয়ে যায়। তাই ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংসী বিষয়গুলোর জ্ঞান অবশ্যই অর্জন করতে হবে অন্যথায় তাবিজ ব্যবসায়ী, কবর পুজারি, গাছ পুজারি এসমস্ত লোকেরাও বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে আপনার ঈমান নিয়ে টানাটানি করতে পারে।

আলহামদুলিল্লাহ্‌ এসমস্ত বিষয়ে মৌলিকভাবে অনেক বই ইতিমধ্যে রচিত হয়েছে সেই বইগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য চেষ্টা করুন। আক্বীদার বইগুলো প্রথমে আপনি স্টাডি করার চেষ্টা করুন। এই বিষয়টি অনেক দীর্ঘ একটি আলোচ্য বিষয়। আপনারা যারা প্রশ্ন করছেন তাদেরকে আমরা অনুরোধ করবো আপনারা প্রশ্নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করবেন। এমন প্রশ্ন করবেন না যেটি সেমিনারে আলোচনা করার দরকার আছে অথবা যেটি নিয়ে একটি মুহাদ্বারা বা বড় ধরনের একটি লেকচার হতে পারে। এ ধরনের না করাই ভালো। সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করাটাই আমি মনে করি এই ধরনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রযোজ্য বা ওয়াইজ। কমন প্রশ্নের উত্তর অনেক লম্বা হয়ে থাকে তাই এসব ব্যাপারে আপনারা নিজেরা জানার জন্য চেষ্টা করুন, স্টাডি করুন। এ বিষয়গুলো থেকে কিছু বের করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *