বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু ‘আলাইকুম!

এই ব্লগে ইসলামের শুদ্ধ-জ্ঞানভিত্তিক লেখা যারা লিখে থাকেন – তাদের মাঝে “উমর’ নিকধারী ভাইটি অন্যতম। তিনি যখন দলীয় রাজনীতি বা বাইয়াত নিয়ে লিখলেন, তখন দেখা গেল অনেকেই অপছন্দ করছেন। একইভাবে “মনপবন” নিকধারী গতকাল তার তথাকথিত প্রবচনে (১৬তম পর্বে) যখন দল বা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর বিরুদ্ধে বললেন, আমি দেখলাম খুব অল্প সময়ের মাঝেই তিনি প্রথম “মাইনাস”টি অর্জন করলেন। ইসলামের সত্যাসত্য সম্বন্ধে জানতে চাই – এমন কথা উচ্চারণ করলেও, দলের মোহ কাটাতে না পারা ব্লগাররা অনেক ক্ষেত্রেই বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার এমন মনোভাব পোষণ করে থাকেন! আগেও অনেকবার পড়েছি এবং শুনেছি – তবু, গতকাল মদীনা থেকে PhD করা এদেশের জন্য দুর্লভ একজন স্কলারের কাছে দ্বীন-শিক্ষার এক পর্যায়ে আবার যখন শুনলাম যে, মুসলিমদের দলে দলে বা ফিরক্বায় ফিরক্বায় বিভক্ত হওয়া চলবে না – কোন দলের দিকে আহ্বান করা যাবে না – দাওয়াত দিতে হবে কেবল আল্লাহর দিকে – ক্বুরআনের ভাষায়, ইলাল্লাহ্! তখন নতুন করে ব্যাপারটা চিত্তে আবার সজীব হয়ে উঠলো। আজ অন্য একটা ব্লগে আমার একটা পুরাতন লেখা খুঁজে বের করে ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি – আবারো, সবাইকে এবং নিজেকে মনে করাতে যে, ইসলামের সঠিক রূপ কেবল একটিই

১) সংশ্লিষ্ট হাদীসটি হচ্ছে:
“My Ummah will split up into seventy-three sects, all of them will be in the Fire except one sect.” They asked: “Which one, O Messenger of Allah? He replied: “Al-Jama`ah (the true followers of the Prophet).” [Albaani:Saheeh Sunan at-Tirmidhi]

আরেকটা বণর্নায় এসেছে:
“The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) also described them in the following terms: “My ummah will split into seventy-three sects, all of whom will be in Hell except one group.” They said: Who are they, O Messenger of Allaah? He said: “(Those who follow) that which I and my companions follow.” [This is mentioned in the hadeeth of ‘Abd-Allaah ibn ‘Amr which was recorded and classed as hasan by al-Tirmidhi (2641). It was also classed as hasan by al-‘Iraaqi in Ahkaam al-Qur’aan (3/432), al-‘Iraaqi in Takhreej al-Ihya’ (3/284) and al-Albaani in Saheeh al-Tirmidhi.]

এই সমষ্টিটি হচ্ছে রাসূল(সা.) ও তাঁর সাহাবীরা (রা.) যে পথের উপর ছিলেন, সেই পথের উপর যারা থাকবে তারা। আল্লাহর রাসূল(সা.) “আল জামা’আহ” শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন! আমাদের বুঝতে হবে যে, তাঁর জীবদ্দশায় সকল মুসলিমই সেই জামাতের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন – এমনকি মদীনার প্রসিদ্ধ মুনাফিকরাও বাহ্যত সেই জামাতের অন্তর্ভূক্তই ছিল, তারা আলাদা কোন “দল” গঠন করে নি! আজ সেই “আল জামা’আহ”র physical existence যেমন নেই, তেমনি অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, শুধু “মুসলিম” বলতেও এখন আর কিছু বোঝায় না!! ক্বাদীয়ানী, দ্রুয, আলাভী, ইসমাইলী শিয়া, সেভেনার শিয়া, মূলধারা টুয়েলভার শিয়া, যায়েদী শিয়া, ১৯ নম্বরের তত্ত্ব অনুসারী submittersগণ, খারেজী (যেমন ওমানের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ইবাদাইটস ফিরক্বা), সূফীদের হাজারো ফিরক্বা সহ আমাদের এই দেশের আটরশী, দেওয়ানবাগী, আযানগাছী, কুর’আনিউন সবাই বলবে যে তারা মুসলিম – যদিও এদের অনেকেই স্পষ্টতই ইসলামের গন্ডির বাইরে। অগণিত ফিরক্বার ভিতর, রাসূল(সা.) ও তাঁর সাহাবীরা (রা.) যে পথের উপর ছিলেন, সেটার অনুসারী বোঝাতে, পরবর্তীতে রাসূলের (সা.) মৃত্যুর পরে, স্কলাররা “আহলুস সুন্নাহ ওয়া আল-জামা’আহ” কথাটা ব্যবহার করতে শুরু করেন – যদিও এখন অনেক ভ্রান্ত দলও দাবী করে যে, তারাও “আহলুস সুন্নাহ ওয়া আল-জামা’আহ”র অন্তর্ভূক্ত! ইসলামের পরিভাষায় “রাসূল(সা.) ও তাঁর সাহাবীরা (রা.) যে পথের উপর ছিলেন”, সেটার অনুসারী বোঝাতে আরো কিছু অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হয় যেমনফিরক্বাতুন নাজিয়াবা নাজাত প্রাপ্ত দল এবং তায়িফা মানসুরাবা বিজয়ী দল। স্কলাররা মনে করেন, পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থাকা যে কোন মানুষই এই দলের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে – যদি সে to the best of his knowledge কেবল রাসূলকে (সা.) তার নেতা বা অনুসরণীয় মনে করে। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও এরা হবে পানির বিন্দুর মত – অনেক গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পানির বিন্দুকে, একখানে নিয়ে আসলে তারা মিলেমিশে একটা বড় পানির বিন্দুতে পরিণত হয়, আলাদা আলাদা বিন্দু আর থাকে না! আমরা নিশ্চয়ই সবাই অবশ্যই সেই দলের অন্তর্ভূক্ত হতে চাইবো? আর সে জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের আমলকে পরখ করে দেখবো যে, আমরা মনগড়া [অন্য মানুষের উদ্ভাবিত] কোন ইবাদত করছি কিনা – দ্বীনের [মূলত ইবাদতের] সব কিছুকে সব সময় রাসূল(সা.)-এঁর জীবনের উদাহরণের সাথে মিলিয়ে দেখবো – তিনিই হচ্ছেন আমাদের একমাত্র আদর্শ বা paradigm।
২)”বাইয়াত” শব্দটা এসেছে “বাই” বা বেচাকেনা থেকে। আপনি আমার পুরানো মটর সাইকেলটা আমার কাছ থেকে কিনতে চান। কথাবার্তা হলো, দামদর ঠিক হলো, বিক্রেতা ও ক্রেতা যখন একমত হলাম, তখন আমরা হাত মিলালাম – এটাও বাইয়াত, তবে এটা minor bayat । আর পৃথিবীতে যদি ইসলামী খিলাফত থাকতো বা রাসূলের (সা.) বলা “আল-জামা’আহ” থাকতো, তবে সেই জামাতের বা খিলাফতের আমীরের কাছে বাইয়াত [বা আনুগত্য] হতো major bayat, যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অবশ্যকরণীয় হতো । “বাইয়াত বিহীন মৃত্যু হচ্ছে জাহিলিয়াতের মৃত্যু” বলতে এই বাইয়াত বোঝানো হয় – যে কোন কারো কাছের বাইয়াত নয়।

ফি আমানিল্লাহ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *