প্রশ্নঃ কবর বাধানো সম্পর্কে জানতে চাই?
প্রশ্নঃ কবর বাধানো সম্পর্কে জানতে চাই?
উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
উত্তরঃ ধন্যবাদ আপনাকে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে এমনভাবে কবরের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যাতে করে কোনোভাবেই আল্লাহর বান্দাগণ কবরের ব্যাপারে শিরকে লিপ্ত না হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ ব্যাপারে হাদিসের মধ্যে স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। কারণ, এই কবরকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ কবরপূজাকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বহু ধরনের শিরক প্রবেশ করেছে। জাবের রাদি’আল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন,
عن جابر قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يجصص القبر وأن يقعد عليه وأن يبنى عليه وفي لفظ ان يكتب عليه
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরকে বাধাতে অথবা কবরকে পাকা করতে নিষেধ করেছেন, কবরে বসতে নিষেধ করেছেন, কবরের উপর কোনো ধরনের সৌধ বা কোনো ধরনের নির্মাণ করতে নিষেধ করেছে।” (মুসনাদ আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
এবং সুনান নাসাঈর আরেকটি রেওয়াতের মধ্যে এসেছে যে কবরের উপর কিছু লিখতেও নিষেধ করেছেন। এ হাদিসের ব্যাখার মধ্যে ইমাম শাওকানী (রহ.) নাইলুল আওতারের মধ্যে বলেন, “এই হাদিসের মধ্যে সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে কবরের উপর যেকোনো ধরনের নির্মাণ হারাম হওয়ার ব্যাপারে।” এ বিষয়টি ইমাম নববী (রহ.) শারহুল মুহাযযাবের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “কবরকে পাকা করার কাজটি মাকরূহ।” মুতাকাদ্দিমীন ‘উলামায়ে কিরাম মাকরূহ বলতে হারামকে বুঝাতেন অর্থাৎ হারাম এবং কবরের উপর নির্মাণ করা ও কবরের উপর লিখাকে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কেউ এ কাজগুলো করেন তাহলে তিনি বলেছেন এটিকে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনে আবি তালেবকে এই অসিয়তটুকু করেছেন যে, সহিহ মুসলিমের হাদিসের মধ্যে এসেছে,
عن أبي الهياج الأسدي قال : قال لي علي بن أبي طالب: ألا أبعثك على ما بعثني عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” أن لا تدع تمثالا إلا طمسته ، ولا قبراً مشرفا إلا سويته ”
আবুল হাইয়াজ আল আসাদী (রহ.) বর্ণনা করেন আলী রাদি’আল্লাহু তা’আলা আনহু আমাকে এমন একটি কাজে পাঠিয়েছেন যে কাজে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (‘আলী রাদি’আল্লাহু তা’আলা আনহু) প্রেরণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, “যদি এমন কোনো কবর পাও যে কবরকে উঁচু করা হয়েছে তাহলে তুমি সেটিকে সমান করে দিবে।” (সহিহ মুসলিম ৯৬৯)
قال الحافظ ابن حجر :
وَفِي الْحَدِيث مَشْرُوعِيَّة إِزَالَة مَا يُفْتَتَن بِهِ النَّاس مِنْ بِنَاء وَغَيْره سَوَاء كَانَ إِنْسَانًا أَوْ حَيَوَانًا أَوْ جَمَادًا اهـ
ইমাম ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এ হাদিসে বুঝা যায় যে মানুষ যেসব কাজের মাধ্যমে যেমন, কবরের উপর নির্মাণ করা অথবা কোনো ধরনের ছবি অঙ্কন করা চাই তা মানুষের ছবি অথবা প্রাণীর ছবি অথবা বস্তুর ছবি যাতে মানুষ ফিতনায় পতিত হয় বা বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হতে পারে তা দূর করা বা বিনষ্ট করা ইসলামী শরিয়তে সংগত ও ইসলামের নির্দেশনা।
কবরের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এত সতর্কতার কারণ হচ্ছে, কবরকে উঁচু করার মাধ্যমে সর্বপ্রথম যে শিরক আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে এ শিরকের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার কবরের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
عن عطاء بن يسار أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ
আত্বা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ” হে আল্লাহ্ আপনি আমার কবরকে প্রতিমায় পরিণত করবেন না যাতে এর উপাসনা করা হয়ে থাকে।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেক ৫৯৩)
আরেকটি রেওয়াতের মধ্যে এসেছে তিনি বলেছেন
وَلَا تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا
“তোমরা আমার কবরকে ঈদে পরিণত করো না।”(আবু দাউদ ২০৪২)
অর্থাৎ বারবার এসে যিয়ারত করা, উৎসব ও সম্মেলনস্থানে পরিণত করা থেকে বিরত থাকো।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে কবরকে কেন্দ্র করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। সুতরাং কবর বাধানো ইসলামী শরিয়তের মধ্যে সুস্পষ্ট হারাম। এখান থেকে আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে, মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক হতে হবে। তাই যারা কবর বাধাই করেছেন তাদের উচিৎ হচ্ছে এ কাজটি সঠিক মনে না করে এটি ভেঙ্গে দেয়া এবং কবরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেয়া। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে বিষয়গুলো উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন এবং সহিহ সমঝ/বুঝ দান করুন। আমীন।