একজন ইদি আমীন ও আমরা……..
ইদি আমীন তখন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার মধ্যস্থলে ব্যয়বহুল এক ভাষ্কর্য বানানো হচ্ছে অনেক দিন ধরে, সরাসরি প্রেসিডেন্টের আদেশে। স্বভাবতই নির্মীয়মান ঐ ভাষ্কর্য ঢেকে রাখা হয়েছে – শেষ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচনের জন্য। কাজটা প্রায় শেষ হয় হয় – এরই মাঝে একদিন বুল-ডজার এসে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিল প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া মূর্তিটি – তাও প্রেসিডেন্টের সরাসরি আদেশে। ইদি আমীনকে ব্যাপারটা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন যে, মূর্তিটা ছিল বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হিটলারের – কিন্তু তিনি আগে জানতেন না যে, লোকটি আসলে এত খারাপ ছিল! এখন যখন জেনেছেন, তখন মূর্তিটি আর রাখা যায় না। ঘটনাটা আমি জেনেছি পশ্চিমা মিডিয়ার কাছ থেকে – হলুদ সাংবাদিকতার পথ-প্রদর্শক, ইহুদী নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা কুফফারদের মিডিয়া কর্তৃক পরিবেশিত এই ধরনের খবর বা গল্পে কিছুটা exaggeration থাকতেই পারে – বিশেষত ব্যক্তিটি যদি তাদের অনুগত না হয়! কিন্তু এর খুঁটিনাটি সত্যাসত্য যাই হোক না কেন – আমি ঘটনাটা বললাম অন্য কারণে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দু’টো ঘটনার সাথে ইদি আমীনের ঐ ঘটনার বেশ সাদৃশ্য রয়েছে বলে।
ড.ইউনুস যেদিন নোবেল প্রাইজ পেলেন – আমার খুব বিষন্ন লাগছিল। না, তিনি কোনভাবেই আমার প্রতিদ্বন্দী ছিলেন না – অথবা, তাকে হিংসা করার আমার কোন কারণ ছিল না, তিনি সরাসরি আমার কিছু কেড়েও নেন নি কখনো। তবু, মনে হলো তিনি ইসলামের বিরাট একটা ক্ষতি করলেন। ইংরেজীতে Island in the stream বলে একটা অভিব্যক্তি আছে – চারিদিকে প্রতিকূল অবস্থার মাঝখানে পরিবেশ/প্রতিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার একটা সেন্স রয়েছে কথাটাতে। চারিদিকের প্রবাহমান পানি একটু একটু করে দ্বীপটার ক্ষয় সাধন করছে, মাটি ধ্বসে গিয়ে ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে দ্বীপটা – এমন কথা বোঝাতেও অনেকে ঐ অভিব্যক্তিটা ব্যবহার করে থাকেন। কুফর এবং কাফির পরিবেস্টিত বাংলাদেশের মুসলিমদের ইসলামী মূল্যবোধ – যা কিনা Island in the stream-এর মত প্রতিকূল আবস্থার মাঝে ছিল/রয়েছে – তার একটা অংশ যেন ধ্বসে গেল। দেশের মুখ্য ইসলামপন্থী দলটির পক্ষ থেকে তাকে সাধুবাদ জানানো হলো – দেশের জন্য দুর্লভ সম্মান বয়ে আনার জন্য। আর তাদের ছাত্র সংগঠনটি সরাসরি তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করলো। আমি ভাবতে চেষ্টা করেছি অভিনন্দনটা আসলে কেন জানানো হলো? সম্ভাব্য যে সব কারণ হতে পারতো সে গুলোর ভিতর ছিল:
১) দেশের ৬৭ লক্ষ মানুষকে তিনি এমন একটা গুনাহর সাথে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, যার সর্বনিম্ন ধাপটি হচ্ছে নিজের মায়ের সাথে সংসর্গের গুনাহর সমান। শুকরের গোশত হারাম হলেও, আল্লাহ এই গুনাহর জন্য কখনো “শুকরের-গোশত-খাওয়া” মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন নি – তবে সুদ সম্পৃক্ততার জন্য তিনি তাই করেছেন, যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন (কুর’আন,২:২৭৯)। প্রায় ৯০% মুসলিমের দেশে এটা একটা বিরল এবং কস্টার্জিত সাফল্য বটে।
২) দেশপ্রেমের প্রতিযোগীতায় কারো চেয়ে পিছিয়ে না পড়ে থেকে বরং এগিয়ে যাবার এই মোক্ষম সুযোগটি হাতছাড়া না করতে হয়তো তারা ড.ইউনুসকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন – অনেকটা more catholic than the Pope হতে চেয়ে।
যাহোক, আমার ঐ দুঃখের দিনে খুব অপ্রত্যাশিত দুজন মানুষকে সত্যের সাক্ষ্য দিতে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম – যাদের একজন ছিলেন মুফতি আমিনী, যিনি বলেছিলেন যে, ড.ইউনুস ইসলামের শত্রু ! আরেকজন ছিলেন বদরুদ্দিন উমর – খবরের কাগজে বিভিন্ন প্রতিবাদ ছাড়াও, যার লেখা “ড.ইউনুসের দারিদ্র্য বাণিজ্য” তখন অনেককে সত্যাসত্য সম্বন্ধে একটা সঠিক ধারণা দিয়েছিল।
ড.ইউনুসকে নিয়ে গত দু’দিনের লেখালেখিতে, আমার আবার অনেক বছর পরে, উগান্ডার প্রসিডেন্ট ইদি আমীনের গল্পটা মনে পড়ে গেল!