ইসলামী Feminism – ১
লিখেছেন লোনার ০২ জানুয়ারী ২০১১, রাত ১২:৪৩
আল্লাহ্ সুবাহানাওয়া তা’আলা ও রাসূল (সা.)-এর কাছ থেকে অহীভিত্তিক জ্ঞান মতে আমরা জানি যে, ইসলাম আবার পৃথিবীতে বিজয়ী হবে – আবার পৃথিবী শাসন করবে। আমি বিশ্বাসী মুসলিম, আর তাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ইসলাম সত্যিই আবার পৃথিবী শাসন করবে – কারণ আল্লাহ্ ও তার রাসূলের (সা.) কথা অবশ্য অবশ্যই সত্য! আমরা আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করলাম কিনা বা মুসলিম থাকলাম না কি ঈমান হারিয়ে “কাফির” হয়ে গেলাম কিনা, irrespective of that – আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবেই হবে এবং এজন্য আল্লাহ্ কারো বা কিছুর মুখাপেক্ষী নন! কিন্তু যুক্তি দিয়ে আজ যদি আমরা চিন্তা করতে বসি যে, আমরা, মুসলিমরা, কোন পথে এবং কোথায় চলেছি – তবে কোন দিক থেকেই, কোথাও আশান্বিত হবার আসলে কিছুই নেই! এ যেন রাসূল (সা.)-এঁর নবুয়তপূর্বক মক্কা নগরীর দশা!তখন যদি কেউ বলতো যে, ঐ অঞ্চলের মানুষ একদিন পৃথিবী শাসন করবে, তাহলে হয়তো কথাটা হাস্যকর শোনাতো। আজও যদি ইসলামে বিশ্বাসী নয়, এমন কাউকে আমি বলি যে, ইসলাম আবার পৃথিবী শাসন করবে – তাহলে তার কাছেও হয়তো ব্যাপারটা সেরকম হাস্যকরই মনে হবে। ইসলাম নিয়ে কথা বলতে গেলে বা ইসলামের দাওয়াত দিতে চাইলে – বাংলাদেশের মত ৮৭% মুসলিমের একটা দেশেও আজ শতদিক থেকে আক্রমণ আসে। অবস্থাটা দাঁড়ায় শত-ছিন্ন স্বল্প-পরিসর একখানা জীর্ণ বস্ত্র দিয়ে দেহ ঢাকতে চাওয়ার অবস্থার মত – কোন অঙ্গ আগে ঢাকবেন বা কোন ফ্রন্টে আগে যুদ্ধ করবেন তা নিয়ে এক দিশেহারা অবস্থার সৃষ্টি হয়।
সমর বিজ্ঞানে soft target বলে একটা প্রচলিত কথা আছে – যেখানে আঘাত করাটা সহজ, অথচ যেখানে আঘাত করলে শত্রু পক্ষের জন্য সামাল দেয়া মুশকিল – তারা সহজেই ঘায়েল হবে! একটা সহজ উদাহরণ হচ্ছে: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জাপানে আমেরিকার জন্য soft target ছিল হিরোশিমা ও নাগাসাকি! মাত্র দু’টো আক্রমণেই লক্ষ্ লক্ষ্ নাগরিক নিহত হওয়াতে জাপানের “কোমর ভেঙ্গে যায়” – তারা বলতে গেলে দাসখত দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ইসলামকে চিরন্তন শত্রু জ্ঞান করে ইহুদী ও খৃষ্টানরা সব সময় ইসলামের জগতে তাদের soft target নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছে – যদিও soft target সব সময় যে একই থাকবে, এমন কোন কথা নেই। যাহোক, না না গবেষণার পর তারা দু’টো soft target নির্ধারণ করেছে:
১) রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ্
আর
২)ইসলামে নারীর অবস্থান
প্রথমটি এজন্য যে, সুন্নাহ্ থেকে মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করতে পারলে, প্রায়োগিক ইসলামের আর অস্তিত্ব থাকবে না – ইসলাম তখন খৃস্টধর্মের মত, সপ্তাহে-একদিন-উপসনালয়ে-যাওয়া একটা ধর্মে পরিণত হবে । ঔপনিবেশিক যুগের ২০০+ বছরে যা achieve করা যায় নি, তাই এক দশকেই achieve করা সম্ভব হবে – একজন মুসলিম, ইসলামকে জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে – তাই আর জানবে না। ইতিমধ্যেই আযান দেয়া, জানাজার সালাত পড়ানো বা পড়া, লাশ ধোয়ানো বা নিজের কুরবানীর পশু জবেহ করার মত অতি সাধারণ প্রায়োগিক বিষয়গুলো অনেকেই ভুলতে বসেছেন – বিশেষত নাগরিক জনসংখ্যা! সুন্নাহ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারলে, অচিরেই মুরগী জবেহ্ করতেও হুজুর খোঁজ করতে হবে আমাদের। তাছাড়া সাধারণ মুসলিমরা যেহেতু সুন্নাহ্ সম্বন্ধে খুব অবগত নন, তাই (ক) নবী (সা.) মারা যাওয়ার ২০০ বছর পর হাদীস সংরক্ষণ/সংকলন শুরু হয়েছিল (খ) কুর’আন হচ্ছে অহী, কিন্তু সুন্নাহ হচ্ছে মানুষের কথা (গ) দ্বীন পালনের জন্য কুর’আনই যথেষ্ট – ঘরের ও বাইরের শত্রুদের এই ধরণের মিথ্যা প্রচারণার মধ্যে তারা (ইসলামের শত্রুরা) সুন্নাহকে একটা প্রিয় soft target হিসেবে নির্ধারণ করেছে।
উপরের দ্বিতীয় বিষয়টিকে তারা এজন্য soft target নির্ধারণ করেছে যে, তারা জানে:একক পরিবার বা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হচ্ছে ইসলামের building block – সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও ইসলামের পরিবার তাদের কাছে ঈর্ষণীয় অথচ দুর্ভেদ্য এক দূর্গ ছিল! কিন্তু এখন আর নয় – এখন তারা নারীর যৌন স্বাধীনতা, নারী অধিকার, নারীর ক্ষমতায়নের মত গালভরা কিছু বুলির “গোলা-বর্ষণ” করে এবং “ঘরের শত্রু বিভিষণ” হিসবে মুসলিমদের ভিতর থেকে কিছু নারীবাদী তৈরী করে, সেই দূর্গে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। তাদের আশা: building block-কে ঝুরঝুরে করতে পারলে, বিল্ডিং এমনিতেই ধ্বসে পড়বে! পরিবার না থাকলে আপনার ইসলাম “ধারন” করবে কে??
ইসলামের সকল দাওয়াত তৌহীদ (বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ) থেকে শুরু হতে হবে – একথা জানা সত্ত্বও, আমরা যেহেতু already মুসলিম এবং একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্য – সেহেতু কিছু কিছু অবনতি ও অধোঃগতি আমাদের ignore করার বা চেয়ে চেয়ে দেখার উপায় নেই – আমরা প্রতিবাদ করি, আলোচনা করি, অন্যকে সচেতন করার চেষ্টা করি এবং “ধ্বস” আটকানোর চেষ্টা করি। সেজন্যই আজ এই লেখায় হাত দেয়া। আমি কখনো ভাবি নি যে, এই ব্লগে নারীবাদ নিয়ে লিখবো – আমার অগ্রাধিকারে তা ছিল অনেক পরে। কিন্তু ‘আলেমের ঘরে বড় হয়েও, একজন বিকৃতরুচির নারীবাদী যে ভাবে ইসলামী সমাজকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, এই ব্লগে ইসলামকেই প্রকারান্তরে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন, তা দেখে ভাবলাম এই বিষয়ে এখনই কলম ধরা প্রয়োজন!
[ইনশা’আল্লাহ্ চলবে…]