আমি সমুদ্র দেখেছি, একবার নয়, বার বার – বহুবার।
বন্দর থেকে বন্দরে, সাগর মহাসাগর পেরিয়ে ছুটে গেছি বার বার!
কৌতূহলী তারাদের সাথী করে – সমুদ্রে, মহাসমুদ্র্রে কেটেছে
জীবনের অগণিত নিঃসঙ্গ রাত – প্রায় একটা গোটাজীবন!
একে একে সবই দেখেছি – সাগর, উপ-সাগর, মহাসাগর।
বহু সূর্যোদয়, বহু সূর্যাস্ত দেখেছি- একবার নয়, বার বার – বহুবার।

পৃথিবীর কোলাহল থেকে দূরে, চিরতন-হরতন-ইস্কাপনের
গৎ বাঁধা নিয়ম ভেঙে, একান্তে নিজের কাছে থাকবো বলে –
আমার সমুদ্রগামী হওয়া।
শব্দদূষণ আর সংকীর্ণতা এড়াতে, জীবনের যানজট থেকে বাঁচতে,
অহেতুক বাক-বিতন্ডা পরিহার করতে – আপন মনে থাকবো বলে-
আমার প্রথম সমুদ্রে যাওয়া।

ভেবেছিলাম পৃথিবীর অগণিত ব্যথার নদীগুলোর নীল জল –
সমুদ্রে গিয়ে মেশে বলেই বুঝি সমুদ্রের রং নীল।
পরে জেনেছি, সাগরের জলরাশি কেবল নীলই নয় –
সময়ের সাথে বদলায়, আরো বহু রঙের হয়।
সে রং কখনো সবুজ, গাঢ় নীল – কৃষ্ণ কালো অথবা বর্ণহীন।
ঋতু বা নারীর মতই প্রতিনিয়ত রং রূপ বদলাতে থাকে তার।
সমুদ্র কেবল প্রশান্তই নয়, বরং আমাদের মতই শোক-দুঃখে কাতর
কখনো জরাগ্রস্ত, কখনো পরাভূত, অস্থির, অশান্ত।

ভেবেছিলাম সমুদ্রের কি বিশাল হৃদয় হবার কথা –
সব জলধারা, আর সকল অশ্রুর নোনা জল যেথায় গিয়ে মেশে
তার আবার দুঃখ কি – নিশ্চয়ই সে সকল দুঃখ হরণকারী প্রশান্ত, নিথর।
কিন্তু পরে জেনেছি, ঝড়ো বাতাস হঠাৎই এসে সমুদ্রের
জীবন যখন তছনছ করে দিয়ে ফিরে যায়, সমুদ্র তখন আমাদের
নারী প্রকৃতির মতই হত-বিহ্বল – কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে –
ফুঁসে ওঠে অভিমানে, কিছুই-না-করতে-পারার দুঃখে।
তারপর ঝড় থেমে গেলে, একসময় কান্ত ও পরিত্যক্ত
সমুদ্রের কান্না থামে, লাভ-ক্ষতির সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা চলে –
আমাদেরই মত, সে আগামীর তরে বুক বাঁধে, সকল দুঃখ ভুলে।

mariner77_1276744631_1-MVC-334S

[ছবিটি জাহাজ থেকে তোলা দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান(পুসান) বন্দরের]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *