প্রশ্নঃ ইয়াদ ইবনু হিমার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নবী ﷺ কে একটি উষ্ট্রী উপঢৌকন দিলে নবী ﷺ আমাকে জিজ্ঞেস করেন তুমি ইসলাম গ্রহন করেছো কি? আমি বললাম, না। নবী ﷺ বললেন আমাকে মুশরিকদের উপঢৌকন গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সুনান আবু দাউদ ৩০৫৭)

শাইখ এ হাদিস থেকে কি বুঝা যায়?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ সম্মানিত ভাই আপনি ইয়াদ ইবনু হিমারের সূত্রে যে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন এটি ইমাম তিরমিযীসহ অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। প্রথমত, কেউ কেউ এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন আবার কেউ কেউ হাদিসটিকে দূর্বল বলেছেন অর্থাৎ এ হাদিসের সনদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যদি হাদিসটি সনদের দিক থেকে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে বক্তব্য হচ্ছে আল্লাহর রাসূল ﷺ যে ব্যক্তি এ হাদিয়া দিয়েছেন তার এ হাদিয়াটুকু পছন্দ করেননি কোনো কারণে। এই কারণে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন যে, মুশরিকদের উপঢৌকন গ্রহণ করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে রাসূলুলুল্লাহ্ ﷺ তার এই উপঢৌকনটি গ্রহণ করেন নি; এটি হতে পারে। তবে আবু মুহাম্মাদ ইবনে হাজম আন্দালুসি (রহ.) বলেন এই হাদিসটি মানসূখ হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী সময়ে আল্লাহর রাসূল ﷺ মুশরিকদের বিভিন্ন হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। খাইবারের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ইয়াহূদীদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন এবং বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর হাদিয়া গ্রহণ করার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে। তাই এ বিষয়ে শাইখ আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ্ বিন বায (রহ.) তার ফাতাওয়ার মধ্যে উল্লেখ করেন অর্থাৎ তিনি বলেন যদি এই হাদিয়া গ্রহণের মাধ্যমে কাফিরদের সাথে তা’লিফ হয় অথবা তাদের সাথে সুসম্পর্ক হয় অথবা তাদেরকে ইসলামের বিষয়ে আকৃষ্ট করার কোনো বিষয় থাকে অথবা তাদের কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার কোনো উপায় থাকে তবে সেক্ষেত্রে উচিৎ হচ্ছে হাদিয়া গ্রহণ করা। আর যদি এমন হয় যে, কাফির ব্যক্তির হাদিয়া গ্রহণ করার মাধ্যমে ইসলামের ক্ষতি হতে পারে অথবা মুসলমানদের ক্ষতি হতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে হাদিয়া গ্রহণ না করাটাই উত্তম। তাই আমরা মনে করি শাইখ আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ্ বিন বায (রহ.) যেটি বলেছেন সেখানে তিনি সবচেয়ে বেশি মাসলাহাতের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং হাদিয়া গ্রহণের বিষয়টি মূলত মাসলাহাতের সাথেই সম্পৃক্ত। সম্ভবত আল্লাহর নবী ﷺ এখানে মাসলাহাতের কারণেই এই কথা বলেছিলেন যে মুশরিকদের হাদিয়া বা অনুদান গ্রহণ করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সালাফে স্বলেহীনদের ‘আমল থেকে বুঝা যায় যে যদি কোনো কারণে মুশরিকরা হাদিয়া দিয়ে থাকে তাহলে সেটি গ্রহণ করা হারাম বা নিষিদ্ধ নয়। এ হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে বিষয়টি এসেছে সেটাকে আরো বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহ.) হাদিসটির সনদের ব্যাপারে বিতর্ক করেছেন এবং হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যে রেওয়াতের মধ্যে এটি এসেছে যে আমাকে কাফিরদের হাদিয়া গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে সেটিকে তিনি মুরসাল বা গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করেছেন। এ দুইটি রেওয়াতকে সামনে রাখলে বুঝা যায় যে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর বক্তব্য হিসেবে সনদের দিক থেকে এটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করার সুযোগ নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এবং সাহাবীদের ‘আমল দ্বারা এটি সাব্যস্ত হয়েছে যে তারা মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। তাহলে নবী ﷺ বিশেষ কোনো মাসলাহাতে এটি নিষেধ করেছেন বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। আরেকটি বিষয় এমন হতে পারে যে, এই বক্তব্যটি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর জন্য খাসও হতে পারে। হতে পারে যে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ প্রথম সময়ে মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন আবার পরবর্তী সময়ে নবী ﷺ মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করা বা তাদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার বিষয়টিকে তখন সেভাবে নেননি যখন ইসলাম বিজিত হল বা যখন ইসলামের জয় হল। এজন্য রাসূলুল্লাহ্ ﷺ পরবর্তী সময়ে এ কাজটি করেননি।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে হাদিসের মধ্যে একটু বিরোধ রয়েছে যে বিরোধ থেকে মূলত বুঝা যায় যে এটি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর জন্য খাসও হতে পারে অথবা কোনো মাসলাহাতে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এটি নিষেধ করেছেন তাও হতে পারে।

মোদ্দাকথা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ একটি প্রেক্ষাপটে মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন যখন মুসলিমরা মুশরিকদের উপর শক্তিশালী হবে এবং কোনোভাবেই মুশরিকদের তা’লিফুল কুলুব বা তাদের অন্তরকে জয় করার বা তাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা থাকবে না সেক্ষেত্রে আল্লাহর নবী ﷺ মুশরিকদের কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ না করাটা উত্তম মনে করেছেন এবং মাসলাহাত মনে করেছেন। আর তাই তিনি মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করেন নি। যদিও হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহ.) এ হাদিসটিকে দূর্বল হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং হাদিয়া গ্রহণ করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আমরা হাদিসগুলোর বর্ণনার দিকে যদি লক্ষ্য করি তাহলে আমরা দেখতে পারবো দুই পক্ষের যেই হাদিসগুলো রয়েছে সেগুলো সনদের দিক থেকে বা বিভিন্ন বর্ণনার দিক থেকে হাদিসগুলোকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলা যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে এই ব্যাখ্যাটুকু বিভিন্ন আহলুল হাদিস করেছেন যে, নবী ﷺ যখন মাসলাহাত মনে করেছেন মুসলিম উম্মাহর জন্য তখন গ্রহণ করেছেন আর যখন মাসলাহাত মনে করেননি তখন তিনি গ্রহণ করেননি। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *