প্রশ্নঃ সদাক্বার জিনিস কি সবাই খেতে পারবে? যেমন আম, কাঠাল, নারকেল? সদাক্বার টাকা কি মসজিদের কাজে ব্যয় করা যাবে?
প্রশ্নঃ সদাক্বার জিনিস কি সবাই খেতে পারবে? যেমন আম, কাঠাল, নারকেল? সদাক্বার টাকা কি মসজিদের কাজে ব্যয় করা যাবে?
উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
উত্তরঃ ধন্যবাদ আপনাকে। আমাদের আগে জানা দরকার যে সদাক্বা কাকে বলে তাহলে আমরা এই কনসেপ্ট থেকে স্পষ্ট হতে পারবো যে আসলে সদাক্বা কি, সদাক্বা কার জন্য প্রযোজ্য হবে আর কার জন্য প্রযোজ্য হবে না। সদাক্বা মূলত কুরআনে কারীমে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসে দুইটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমত সদাক্বা বলতে ফরয যাকাতকে বুঝানো হয়ে থাকে যেটি কুরআনে কারীমের আয়াত থেকে বুঝা যায়। আবার সদাক্বা বলতে নফল বা অতিরিক্ত যেই দান রয়েছে সেটিকেও বুঝানো হয়ে থাকে।
সদাক্বা হচ্ছে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের ‘ইবাদাতের উদ্দেশ্যে সম্পদ থেকে খরচ করা যেটি শরিয়তের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি; এ দানকে সদাক্বা বলা হয়ে থাকে।
যাকাত এবং এই প্রকারের দানের মধ্যে পার্থক্য এই যে যাকাত হচ্ছে ফরয কিন্তু সদাক্বা মূলত ফরয বা বাধ্যতামূলক নয়। আবার, যাকাতের জন্য সুনির্দিষ্ট খাত রয়েছে কিন্তু সদাক্বার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো খাত নেই। আয়াতুল যাকাতের মধ্যে যে আটটি খাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাকাত শুধু তারাই পাবেন কিন্তু সদাক্বার ক্ষেত্রে আয়াতুল যাকাতের যেই ৮টি খাত রয়েছে তারাও পেতে পারেন আবার যাদের উল্লেখ নেই তারাও পেতে পারেন। এক্ষেত্রে সদাক্বা আপনি আপনার পিতামাতাকে দিতে পারেন, সন্তান সন্ততিকে দিতে পারেন, স্ত্রীকে দিতে পারেন, ধনীব্যক্তিকে দিতে পারবেন, সক্ষম অথবা উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে দিতে পারবেন, আপনার এই সদাক্বা আপনি কাফির-মুশরিককেও দিতে পারবেন। অর্থাৎ এই সদাক্বা মূলত সবাই খেতে পারবেন। আপনি জানতে চেয়েছেন যে সদাক্বার জিনিষ কি সবাই খেতে পারবেন কিনা। জী সদাক্বার আম, কাঁঠাল ইত্যাদি সবাই খেতে পারবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিসের মধ্যে যেটি ইমাম বুখারী (রহ.) বর্ণনা করেছেন তিনি একটি অধ্যায় রচনা করেছেন যে সকল ভালো কাজই মূলত সদাক্বা। সেখানে তিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ রাদি’আল্লাহু ‘আনহু থেকে এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন যে প্রত্যেক ভালো কাজই মূলত সদাক্বা। এর ব্যাখার মধ্যে ইবনে বাত্তাল (রহ.) বলেন, আল্লাহর বান্দা যখনই কোনো ভালো কথা বলবে বা ভালো কাজ করবে সবটাই তার সদাক্বা হিসেবে গণ্য হবে এবং এর প্রতিদান তিনি লাভ করতে পারবেন। তাই সদাক্বা মূলত একটি কমন বিষয় যাতে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এই সদাক্বার টাকা মসজিদে দেওয়াও জায়েয রয়েছে, ফকীর মিসকিনকে দেওয়া জায়েয আছে। তবে সদাক্বার একটি সুরত আছে যদি সদাক্বা এর সাথে মানত বা নযর সম্পৃক্ত হয়ে যায় তাহলে সেই মানত ফকীর-মিসকিন ছাড়া অন্যরা খেতে পারবেন না, অন্যদেরকে দেয়া জায়েয নেই। ওয়াল্লাহু আ’লাম। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।